বোধনের রজতজয়ন্তী উৎসব ভাঙা আয়নায় মুখ না দেখার আহ্বান বিচারপতি ‍হাবিবুর রহমানের

বোধনের রজতজয়ন্তী উৎসব ভাঙা আয়নায় মুখ না দেখার আহ্বান বিচারপতি ‍হাবিবুর রহমানের

‘হে তরুণ বন্ধুরা/যাদের স্বপ্ন ভেঙেছে/যাদের কপাল ভেঙেছে/কখনো তোমরা থাকবে না/তাদের সহবতে/দেখবে না মুখ ভাঙা আয়নাতে। হে তরুণ বন্ধুরা/স্বপ্ন দেখা তোমাদের বড় কাজ/স্বপ্ন দেখানোও তোমাদের বড় কাজ/যে স্বপ্ন পরে ভাঙলে ভাঙুক/এখন তো তা জাগুক/থাকুক জাগরূক তোমাদের মনে/নিত্য নতুন, নিত্য নতুন, নতুন স্বপ্ন।’

শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান তরুণদের উদ্দেশে এভাবেই আহ্বান জানান স্বপ্ন দেখার এবং স্বপ্ন দেখানোর।

জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মুক্তমঞ্চে বোধনের ৪ দিনব্যাপী রজতজয়ন্তী উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সদ্য লেখা এ কবিতা শোনান।

বোধন আবৃত্তি পরিষদের সভাপতি রণজিৎ রক্ষিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান, কবি আবুল মোমেন ও ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সোমনাথ ঘোষ।

জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘কবিতা হচ্ছে মানুষের জীবনের স্বপ্ন। কবিতা মানুষের বাস্তব জীবন।’

কবি আবুল মোমেন বলেন, ‘আমরা একটি অমীমাংসিত ধাঁধার মধ্যে আছি। আমাদের কীভাবে অগ্রগতি হয়েছে তা আমরা বুঝতে পারছি না। রাজনৈতিক দিক দিয়ে রয়েছে অস্থিরতা। আমাদের ক্রমশ সবকিছুর মূলে একটি গোলমাল থেকে যাচ্ছে।’

ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সোমনাথ ঘোষ বলেন, ‘অনেক কঠিন বাস্তবতা ও সাংগঠনিক সমস্যার মধ্যেও বোধন ২৫ বছর যাবত যেভাবে এগিয়ে চলছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমরা বোধনের মতো মুক্তচিন্তার মধ্য দিয়ে একসাথে পথ চলতে চাই।’

পরিষদের স্থায়ী সদস্য পারভেজ চৌধুরীর সঞ্চালনায় এ পর্বে স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল আনোয়ার। সমাপনী দিন সম্মাননা প্রদান করা হয় আবৃত্তিশিল্পী ড. ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

আমি চাকরি ছেড়ে আবৃত্তিকে পেশা হিসেবে নিয়েছি: ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়

শুক্রবার অনুষ্ঠান শুরু হয় ভারতের প্রখ্যাত আবৃত্তিশিল্পী ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে আড্ডার মধ্য দিয়ে। এ সময় তিনি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মকর্তাদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমি চাকরি ছেড়ে আবৃত্তিকে পেশা হিসেবে নিয়েছি অনেক ঝুঁকির মধ্য দিয়ে। কারণ, একজন সঙ্গীতশিল্পী যদি ঘণ্টা দুয়েক গান শুনিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখতে পারে। সে ক্ষেত্রে একজন আবৃত্তিশিল্পী কেন পারবে না? তাই ১৯৯৬ সাল থেকে আমার পথচলা শুরু।’

তিনি আরো বলেন, ‘এখানে পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে অনেক বেশি আবৃত্তি সংগঠন ও আবৃত্তিশিল্পী আছে। তাদের অনেকেরই উচ্চারণ ভালো। কণ্ঠও ভালো কিন্তু মডিলিউশন কম। এখানে একটু প্রতিবাদী কবিতা বেশি। কিন্তু আবৃত্তির মধ্য দিয়ে সমাজ-সংস্করণ, প্রেম-বিনোদনবিষয়ক কবিতা পরিবেশন করে ভালো একটা আর্থিক অবস্থানে আসতে পারে। কারণ, আবৃত্তি হচ্ছে ব্যক্তিগত মুনশিয়ানা। এক্ষেত্রে আবহ সঙ্গীত একটি কবিতাকে অলংকৃত করে।’

বোধনের জয়গান

এরপর চলে স্মৃতিচারণা। আবৃত্তিশিল্পী প্রণব চৌধুরীর সঞ্চালনায় এ পর্বে স্মৃতিচারণা করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, প্রশান্ত চক্রবর্তী, ইন্দিরা চৌধুরী, মানজুর মোহাম্মদ, সুভাষ চক্রবর্তী, ওমর কায়সার, অনুপ সাহা, সুব্রত বড়ুয়া রনি, বিশ্বজিৎ দাশ ভুলু, পারভেজ চৌধুরী, পঞ্চানন চৌধুরী, ফাহমিদা এলাহী পলি, সুছন্দা ঘোষ, সুনীল ধর, অরিত্র ধর রোদ্দুর প্রমুখ।

তাদের কণ্ঠে ছিল অকৃত্রিম মূল্যায়ন, বোধনের জয়গান এবং আগামী দিনের সুন্দর পথচলায় সহযোগিতার প্রত্যয়।

সন্ধ্যায় একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাহিদুল ইসলাম, ঝর্ণা সরকার, তিতাস রোজারিও প্রমুখ। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন গৌতম চৌধুরী ও আফরোজা নীরু।

 

অন্যান্য বাংলাদেশ শীর্ষ খবর