1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৫১ অপরাহ্ন

বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ থাইল্যান্ডের

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১২
  • ১০৪ Time View

বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে থাইল্যান্ড। এছাড়াও অবকাঠামো ও নির্মাণ খাতে বিনিয়োগ এবং কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে  সহযোগিতা করবে দেশটি। ঢাকা সফররত থাই প্রধানমন্ত্রী ইংলাক শিনাওয়াত্রা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তার আগ্রহের কথা জানান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গতকাল দুপুরে শীর্ষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। পরে দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ওই বৈঠকে তার সঙ্গে আসা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। সেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট-লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব শেখ ওয়াহিদ-উজ জামান, কৃষি সচিব মনজুর হোসেন, ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মুস্তফা কামাল ও প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ। ওই আলোচনায়ও বিনিয়োগ সহযোগিতার পাশাপাশি ঢাকা-ব্যাংকক কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায় দু’পক্ষ। আলোচনার সিদ্ধান্ত মতে পররাষ্ট্র ও কৃষি খাতে সহযোগিতা বাড়াতে দু’টি সমঝোতা স্মারকও সই হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব উপস্থিত সাংবাদিকদের বৈঠক ও সমঝোতার বিষয়ে ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কেবল কূটনৈতিক সম্পর্কই নয়, দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কও ঊর্ধ্বমুখী। থাইল্যান্ডের বাজারে বাংলাদেশের ওষুধ, পাট, চামড়াজাত পণ্য, সিরামিক ও তৈজসপত্রের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিলে এই সম্পর্ক আরও গতি পাবে। থাই প্রধানমন্ত্রী দু’দেশের নাগরিক পর্যায়ে যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন জানিয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইংলাক শিনাওয়াত্রার দেশ ও সরকার বাংলাদেশে নির্মাণ ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। একই সঙ্গে কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ সহযোগিতা এবং আকাশ ও নৌপথে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর কথাও বলেছেন তিনি। প্রেস সচিব জানান, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের শুরুতেই শেখ হাসিনা বিজয়ের মাসে বাংলাদেশ সফরের জন্য ইংলাক শিনাওয়াত্রাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি থাইল্যান্ডকে বাংলাদেশের ‘গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু’ বলেও আখ্যায়িত করেন। দক্ষিণ এশিয়ায় ‘বাংলাদেশ’ বিনিয়োগের পরিবেশ সবচেয়ে ভাল জায়গা বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। জবাবে থাই প্রধানমন্ত্রী এ দেশে বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নের প্রশংসা করে দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব এবং দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সমঝোতা স্মারক সই: বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করতে দু’টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সফররত থাই প্রধানমন্ত্রী ইংলাক শিনাওয়াত্রার উপস্থিতিতে দু’দেশের প্রতিনিধিরা পৃথক সমঝোতা স্মারকে সই করেন। পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে নিয়মিত আলোচনায় ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ বিষয়ক সমঝোতা স্মারকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি এবং থাইল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুরাপং তোভিচোকচাইকুল নিজ নিজ দেশের পক্ষে সই করেন। এছাড়া, কৃষিখাতে দুই দেশের বেসরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা বাড়াতে অপর সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে কৃষি সচিব মনজুর হোসেন এবং থাইল্যান্ডের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপমন্ত্রী উতাপং কারাসাথিয়েন সই করেন।
আসিয়ান সংলাপ ও জিসিআই’র অংশীদার হতে থাইল্যান্ডের সহায়তা কামনা: এসোসিয়েশন অব সাউথ এশিয়ানস নেশন্স (আসিয়ান) সংলাপ-এ অংশীদার হওয়া এবং মেকং-গঙ্গা কো-অপারেশন ইনিশিয়েটিভ (এমজিসিআই)-তে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে থাইল্যান্ডের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফররত থাই প্রধানমন্ত্রী ইংলাক শিনাওয়াত্রার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠককালে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সব সময়ই আসিয়ানের সফলতার প্রশংসা করে আসছে। আসিয়ান বৃহত্তর আঞ্চলিক সংহতিকে বাড়িয়ে তুলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গোপসাগরে মিলিত হওয়ার পথে গঙ্গা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তাই বাংলাদেশকে এমজিসিআই-এ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা: সফররত থাই প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনে যান। তিনি ৩২ নম্বর সড়ক সংলগ্ন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং শোক বইতে সই করেন। পরে তিনি জাদুঘরের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন।
স্মৃতিসৌধে থাই প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন: এদিকে সাভার থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, গতকাল দিনের শুরুতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন থাই প্রধানমন্ত্রী ইংলাক। সকাল ৯টায় তিনি স্মৃতিসৌধে পৌঁছান। সেখানে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। তখন বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বীর শহীদদের স্মরণে তিনি দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। পরে পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন এবং স্মৃতিসৌধ এলাকায় একটি পারিজাত গাছের চারা রোপণ করেন। এসময় গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলামসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। থাই প্রধানমন্ত্রীর পরিদর্শন উপলক্ষে ঢাকা থেকে সাভার (স্মৃতিসৌধ এলাকা) পর্যন্ত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ছিল।
বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর আহ্বান: ঢাকা ও ব্যাংককের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দু’দেশের পণ্যের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে পারলে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও বাড়বে বলেও মত দিয়েছেন তিনি। দুপুরে থাই প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে দেয়া মধ্যাহ্নভোজে তিনি এ আহ্বান জানান। হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত ওই ভোজে শেখ হাসিনা বলেন, উভয়ের স্বার্থেই বিদ্যমান বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করা প্রয়োজন। এজন্য বেসরকারি খাতকে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার ‘মডেল’ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা অবকাঠামো, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিদ্যুৎ এবং তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন। উদ্যমী জনশক্তি নিয়ে বাংলাদেশ থাই বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
২৩ ঘণ্টার ব্যস্ত কর্মসূচি শেষে ব্যাংককের পথে: ২০১১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়া ৪৪ বছর বয়সী ইংলাক শিনাওয়াত্রা রাষ্ট্রীয় সফরে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন। ২৩ ঘণ্টা এখানে ব্যস্ত সময় কাটিয়ে গতকাল চারটার দিকে ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। থাই এয়ারওয়েজের একটি বিশেষ বিমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হওয়ার মুহূর্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ঢাকাস্থ থাই দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাকে বিদায় জানান।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ