প্রচার শেষে ভোটের অপেক্ষায় রংপুরবাসী

প্রচার শেষে ভোটের অপেক্ষায় রংপুরবাসী


আগামীকাল নির্বাচন নবগঠিত রংপুর সিটি করপোরেশনে। উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচার-প্রচারণা শেষে এখন ভোটের অপেক্ষায় রয়েছেন নগরবাসী। অনেক দিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর এবারই প্রথম নির্বাচন হচ্ছে রংপুরে। তাই ভোটারদের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। পাড়ায়-মহল্লায় রাস্তায়-দোকানে সবার মুখেই এখন একই আলোচনা- কে হচ্ছেন তাদের বহু কাঙ্ক্ষিত মহানগরের অভিভাবক, শেষ বিজয়ের হাসিটা কার মুখে দেখা যাবে? তবে, বৃহস্পতিবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাজ সাজ রবের মধ্যেও কিছুটা উদ্বেগ-আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে নগরবাসীর মধ্যে। তবে নিরাপত্তার বন্দোবস্ত যথেষ্ট বলে আশ্বস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। নগরীজুড়ে ঘন ঘন টহল চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও। সোমবার মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনী এলাকায় যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে সব প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাস্তাঘাটে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মিডিয়া ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের গাড়ি চলবে।

এছাড়া অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও সিটি করপোরেশনের ময়লাবহনকারী গাড়িও নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।

মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরাও প্রচার-প্রচারণা শেষ করেছেন, যদিও মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত প্রচার চালানো যাবে।

নির্বাচনে মেয়র পদে ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে নাগরিক কমিটির প্রার্থী শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু (মোটর সাইকেল) ও নবগঠিত তৃণমূল জাতীয় পার্টির জেলা আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার (হাঁস) মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

অন্য প্রার্থীরা হলেন- নাগরিক মঞ্চের কাজী মাজিরুল ইসলাম লিটন (টেলিভিশন), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) আব্দুল কুদ্দুস (তালা), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এ টি এম গোলাম মোস্তফা বাবু (জাহাজ), সাফিউর রহমান সফি (দোয়াত কলম), ফিরোজ কবির চৌধুরী গুঞ্জন (কাপ পিরিচ), প্রকৌশলী ফারুখ আজিজ শাহীন (ঘোড়া), আলী হায়দার দুলু (টেবিল) ও মেহেদী হাসান বনি (প্রজাপতি)।

বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। দলীয় কোন্দলে বীতশ্রদ্ধ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও শেষ মূহূর্তে নিজের এলাকার এই নির্বাচনে দলের কাউকে সমর্থন দেননি।

মেয়র নির্বাচিত হলে কী কী কাজ করবেন- জানতে চাইলে আওয়ামী লীহ নেতা শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জীবনের পড়ন্ত বেলায় নিজেকে জনগণের সেবায় উৎসর্গ করতে চান তিনি। একটি সুন্দর পরিকল্পিত নগরী নির্মাণের স্বপ্ন রয়েছে তার।

তিনি নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নের আগে সেখানো কোনো করারোপ করবেন না বলে জানান তিনি।

ঝন্টু বলেন, “মেয়র নির্বাচিত হলে গ্যাস সরবরাহের আন্দোলন শুরু করব। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য নগরীর চার লেন সড়ক প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করব। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখব।”

সিটি করপোরেশন বাস্তবায়ন আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক এই প্রার্থী নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে আশা করেন।

আরেক প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী দাবি করে বলেন, “এবার ভোট বিপ্লব হবে। মেয়র নির্বাচিত হলে একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধশালী নগর গড়ে তুলব।”

এদিকে সদ্যবহিষ্কৃত মোস্তফাকে ভোট না দেয়া এবং তার পক্ষে কাজ না করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় পার্টির জেলা ও মহানগরের নেতারা।

মঙ্গলবার সকালে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদ সম্মেলনে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় মোস্তফাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন এরশাদ।

“এরপর থেকে চেয়ারম্যান, জেলা ও মহানগর নেতাদের বিরুদ্ধে অশালীন ও কটুক্তিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করছেন মোস্তফা।”

এর প্রতিক্রিয়ায় মোস্তফা বলেন,“কারো নির্দেশে ভোটাররা বিভ্রান্ত হবে না।”

রিটার্নিং ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনে ৩৩টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩১৭টি এবং ১১টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৯১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। করপোরেশনের মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৯ হাজার ১২৮ জন এবং নারী ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬১৪ জন।

৩৩টি ওয়ার্ডে ১৭৮টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০৪টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

রিটার্নিং ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান,সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই ভোট কেন্দ্রগুলো নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হচ্ছে।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, নির্বাচনের পুরো সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তিন শতাধিক র্যাোব, চার হাজার ১২৪ জন পুলিশ ও আনসার, দুই প্লাটুন বিজিবি, ৪৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৬ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট, ১২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহায়ক কর্মকর্তা এবং নির্বাচন কমিশনের একটি পর্যবেক্ষক দল দায়িত্ব পালন করবেন।

প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। আর ভিজিলেন্স টিমের দায়িত্বে থাকবেন ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ১৭৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫০টিতে ওয়েব ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে। আর ১১ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের চারটি ভোটকেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে ইভিএম।

১৮৬৯ সালের ১ মে গোড়াপত্তন হয় রংপুর পৌরসভার। ৫৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভায় তখন ওয়ার্ড ছিল ১৫টি। প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন রংপুরের কালেক্টর ই জি গ্লেজিয়ার। সর্বশেষ চেয়ারম্যান ছিলেন আব্দুর রউফ মানিক।

চলতি বছরের ২৮ জুন রংপুর পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা হয়। পৌরসভার আয়তন বাড়িয়ে ২০৩ বর্গকিলোমিটার করে ৩৩টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা নতুন সিটি করপোরেশনকে। করপোরেশনের প্রথম প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) কাজী হাসান আহমেদ।

সিটি করপোরেশনের প্রশাসক কাজী হাসান আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“নির্বাচিত মেয়র স্বচ্ছতার সঙ্গে নগরবাসীর সুবিধা নিশ্চিত করবেন এটাই প্রত্যাশা।”

অন্যান্য জেলা সংবাদ বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর