1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন

সুন্দরগঞ্জে নারীর মৃত্যু অ্যানথ্রাক্সের কারণে নয় : স্বাস্থ্য বিভাগ

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৪৫ Time View

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কিছু সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচারিত হয়েছে। এতে গাইবান্ধাসহ দেশজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এই মৃত্যুটি অ্যানথ্রাক্সের কারণে নয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

মোছা. রোজিনা বেগম ওরফে আজেনা (৪৫) নামের ওই নারী অন্যান্য শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন বলে দাবি করে স্বাস্থ্য বিভাগ জানান, এই মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়াবার কোনো সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের ভীতি দূর করতে ও তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে স্বাস্থ্য বিভাগের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে। এলাকায় নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা. মো. রফিকুজ্জামান বলেন, রোজিনা বেগম সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত শনিবার চিকিৎসা নেন। তার হাতে ফোসকা ছিল।
যেটিকে আমরা অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ বলেছি। অ্যানথ্রাক্সে সাধারণত শরীরের চামড়ায় এ জাতীয় উপসর্গ দেখা দেয়। তবে এতে মানুষের মৃত্যুর কোনো সম্ভাবনা নেই। মূলত ওই নারীর প্রেসার, শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য জটিলতা ছিল।
সে কারণেই তিনি মারা গেছেন।

স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, মৃত রোজিনা বেগম সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের পশ্চিম বেলকা গ্রামের কাঠ মিস্ত্রি মো. আবুল হোসেনের স্ত্রী। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তার পালিত একটি অসুস্থ ছাগল জবাই করেন তিনি। মাংস কাটাকাটির সময় পশুটির হাড়ের খোঁচায় হাতে দুইটি ফোসকা দেখা দেয়। এতে ওই নারী প্রথমে স্থানীয়ভাবে এবং পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন।
তার অন্যান্য শারীরিক জটিলতার কারণে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিবাকর বসাক কালের কণ্ঠকে বলেন, অ্যানথ্রাক্স ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর কোনো সম্ভাবনা নেই। কয়েকদিনের চিকিৎসায় রোগী সুস্থ হয়ে উঠবেন।

তিনি জানান, গত শনিবার হাতের ফোসকা নিয়ে রোজিনা বেগম স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এলে তার ভেতরে প্রেসার, শ্বাসকষ্ট ও বেশকিছু জটিলতা দেখা গেছে। অ্যানথ্রাক্স জনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি জানান, সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হলেও চিকিৎসা নিলে মৃত্যুর কোনো সম্ভাবনা নেই। রোজিনা অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতায় বেশি মাত্রায় ভুগছিলেন। তার প্রেসার অনেক কমে গিয়েছিল। তাই তাকে রংপুর পাঠানো হয়।

ডা. দিবাকর জানান, অ্যানথ্রাক্সে তার মৃত্যু হয়েছে কি-না তা নিশ্চিত হতে নমুনা পরীক্ষার পর জানা যাবে। এ বিষয়ে ঢাকা থেকে আইইডিসিআর টিম নমুনা সংগ্রহে আসবেন। তবে এখন পর্যন্ত উপজেলায় ১৬ জন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, যাদের অনেকেই ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন।

রোজিনা বেগমের স্বজন ও এলাকাবাসী জানান, রোজিনা বেগমের পালিত ছাগল ৬ থেকে ৭দিন আগে দুটি বাচ্চা দেয়। এর মধ্যে একটি অসুস্থ হয়ে পড়লে ৩০ সেপ্টেম্বর সেটি জবাই করার সময় তিনি আঙুলে আঘাত পান। প্রথমে পল্লী চিকিৎসক ও পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র তাকে চিকিৎসা দেয়। অবস্থা গুরুতর হলে শনিবার তাকে রংপুর মেডিক্যাল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে রাতেই তিনি মারা যান। তার ছেলে রুবেল মিয়ার দাবি, ঠিক কি কারণে তার মা মারা গেছেন, তা স্পষ্ট করা হোক।

রোজিনা বেগমের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ। তিনি বলেন, ওই নারী অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কি-না, তা এখনও নিশ্চিত নই। কারণ, পরীক্ষা ছাড়া কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়।
তিনি জানান, তার এলাকায় অনেকে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত। তাই এই মৃত্যুর পর লোকজনের মধ্যে ভীতি দেখা দিয়েছে।

স্বাস্থ্য ও প্রাণী সম্পদ বিভাগ সূত্র বলছে, গত এক সপ্তাহে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১৬ জন অ্যানথ্রাক্স ভাইরাস উপসর্গে আক্রান্ত হয়েছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নে অন্তত ১০টি গবাদি পশু মারা গেছে।

এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার বেলকার কিশামত গ্রামে মাহাবুবুর রহমানের একটি গরু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে সেটি জবাই করে মাংস ভাগাভাগি করা হয়। এ কাজে অংশ নেওয়া ১১ জনের শরীরে কয়েকদিন পর ফোসকা, ঘা এবং পাঁচজনের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। আক্রান্তদের হাত, মুখ, চোখ ও নাকে ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট হতে থাকে। পরে আক্রান্তরা চিকিৎসকের মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হন। তাদের মধ্যে মোজা মিয়া, মোজাফফর মিয়া, শফিকুল ইসলাম ও মাহাবুর রহমানসহ পাঁচজন বেসরকারি ক্লিনিক ও গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নেন এবং অন্যরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাতে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোজিনা বেগওে মৃত্যুর পর তার মরদেহ বাড়িতে নেওয়া হয়। পরদিন রবিবার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ