পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের(এসইসি) কার্যক্রমের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বিনিয়োগকারীরা সম্প্রতি ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়লেও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের সেদিকে নজর নেই। নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। বরং অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়ে বাজারে ক্ষতি ডেকে আনা হয়েছে। তাই দায়িত্ব গ্রহণের ৩ মাসের মধ্যে বাজার স্বাভাবিক করতে না পারলে পদত্যাগ করবেন- এসইসি চেয়ারম্যানের এমন প্রতিশ্রুতি আইওয়াশ কি না এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা এসইসি বর্তমান ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এমনিতে বাজার নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। তার উপর এক মাসে ৪ কোম্পানির আইপিওসহ ১০ কোম্পানিকে উচ্চ প্রিমিয়ামে বাজারে নিয়ে আসা অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত। এর পেছনে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো বোঝাপড়া থাকতে পারে। না হয় বাজার সম্পর্কে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতি নির্ধারকদের দূর্বলতা রয়েছে। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাম্প্রতিক কর্মকা- নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিনিয়োগকারীরাও।
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন, দীর্ঘ ২২ মাস বাজার দরপতনের মধ্যে থাকলেও এসইসি কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেনি। অথচ এসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের সময় বলেছিলেন ৩ মাসের মধ্যে বাজার ঠিক করতে না পারলে তিনি পদত্যাগ করবেন। কিন্তু সেই ৩ মাস আর কতদিন? বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এখন এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিনিয়োগকারীদের মতে, এসইসি যেটুকু ভূমিকা রেখেছে তা কেবলই কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। বাজারের জন্য এসইসির সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ব্যক্তিগতভাবে ২ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারনের নির্দেশনা। এরপর বিভিন্ন সময়ে এসইসি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে পারেনি।
বিনিয়োগকারী সংগঠনের নেতা সাজ্জাদুল হক অভিযোগ করেছেন, সম্প্রতি মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালা সংক্রান্ত বিষয়ে জনমত যাচাইয়ে সময়ক্ষেপন এক প্রকার পক্ষপাতমূলক আচরণ হতে পারে। একইসঙ্গে যখন বাজার একটু স্বাভাবিক পথে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন কোম্পানির রাইট ইস্যূ এবং অধিক প্রিমিয়ামে বিভিন্ন কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিয়েছে এসইসি। এতে করে বাজারে তারল্য প্রবাহ কমে গেছে। বাজারে রাইট ইস্যূ ও আইপিওর অনুমোদন অবশ্যই পরিস্থিতি সাপেক্ষ হতে হবে। এক মাসে ৪ কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিয়ে বর্তমান কমিশন রেকর্ড করেছে। তাই নড়বড়ে বাজারে রাইট ইস্যূ ও অধিক প্রিমিয়ামে নতুন কোম্পানির অনুমোদন দিয়ে কোনো সুবিধা আদায় করা হয়েছে কিনা তা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের খতিয়ে দেখা উচিত বলে এই বিনিয়োগকারী নেতা জানান। তিনি আরো বলেন, প্রতি মাসে একটা এবং বাজার স্বাভাবিক থাকলে সর্বোচ্চ দুইটা আইপিও অনুমোদন বাজারের জন্য যুক্তিসঙ্গত।
কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, এসইসি বাজারের কর্নধার। তাদের কার্যক্রমে বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আস্থা খুঁজে পান। কিন্তু তাদের কার্যক্রমে কোনো সন্দেহের সৃষ্টি হলে অবশ্যই তা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বাজারের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সময়পোযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন বাজার নেতিবাচক প্রবনতার মধ্যে ডুবে থাকায় এসইসি ও সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। আবার যখন বাজার স্থিতিশীলতার দিকে পারি জমাতে শুরু করে তখন বিভিন্ন জনের নানা ধরনের বাজার পর্যালোচনামূলক আলোচনা বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গায় ভীতি ছড়ায়। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে এসইসিকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। এ অবস্থায় গত ঈদের পর বাজার স্থিতিশীলতার আভাস দিলে সব শ্রেনীর বিনিয়োগকারী বাজারে লেনদেনে অংশ নেন। এতে বাজারে দিনের পর দিন টার্নওভার বাড়তে থাকে। কিন্তু অক্টোবরের শুরু থেকে বাজারে আবারও মিশ্রভাব নেমে আসে। যেটাকে বাজার সংশ্লিষ্টরা ঈদুল আযাহার প্রভাব বলে মনে করছেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে বাজারে যদি ঢালাওভাবে আইপিও অনুমোদন ও বাজার থেকে চাঁদা তোলার হিড়িক শুরু হয় তাহলে বড় ধরনের তারল্য সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা আশংকা করছেন।
এদিকে চলতি বছরের ৪ মাসে ১০ কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিয়েছে এসইসি। এরমধ্যে সেপ্টেম্বরে জেনারেশন নেক্সট বাজার থেকে চাঁদা আদায়ের কাজ সম্পন্ন করেছে। কোম্পানিটি প্রিমিয়াম ছাড়া বাজারে ৩ কোটি শেয়ার ছেড়ে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। অক্টোবরে এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেডের চাঁদা সংগ্রহ শেষ হয়েছে। কোম্পানিটি বাজারে ৩ কোটি শেয়ার ২০ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৯০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। এরপর নভেম্বর মাসজুড়ে থাকছে ৪ কোম্পানির চাঁদা সংগ্রহের কার্যক্রম।
এছাড়া আইপিও অনুমোদন ও চাঁদা আদায়ের অপেক্ষায় রয়েছে বেঙ্গল উইন্ডসোর থারমোপ্লাস্টিক। এছাড়া আলোচিত ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড বাজারে ৪ কোটি শেয়ার ছেড়ে ৫০ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২৪০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। আর একই সময়ে এতোগুলো কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেয়াকে বিনিয়োগকারীরা স্বাভাবিক মনে করছেন না।