1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৫২ অপরাহ্ন

সিরিয়ার সাম্প্রতিক সহিংসতায় পুরো পরিবারও নিহত হয়েছে : জাতিসংঘ

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫
  • ২২ Time View

সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে সাম্প্রতিক সহিংসতায় নারী, শিশুসহ পুরো পরিবার নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস জানিয়েছে এই তথ্য। একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জাতিসংঘ গত বৃহস্পতিবার থেকে এখন পর্যন্ত ১১১ জন বেসামরিক নাগরিকের হত্যার বিষয়টি যাচাই করেছে, তবে প্রকৃত সংখ্যাটি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, মনে হচ্ছে এটি সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে, বিশেষ করে আলাউইত এলাকাগুলোকে লক্ষ্য করে।
সুন্নি ইসলামপন্থী সরকারকে সমর্থনকারী বন্দুকধারীদের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগতদের একটি নিরাপত্তা টহল দলের ওপর মারাত্মক অতর্কিত হামলার পর প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।

একটি পর্যবেক্ষণ গোষ্ঠী জানিয়েছে, লাতাকিয়া, তাতুস, হামা এবং হোমস প্রদেশে এক হাজার ২০০ জনেরও বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই আলাউই। এদিকে জাতিসংঘ সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন এবং দায়ীদের জবাবদিহি করার প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানিয়েছে।

গত ৮ ডিসেম্বর আসাদের পতনের পর এটি সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা।
আসাদ সরকার পতনের মধ্য দিয়ে ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে, যেখানে ছয় লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।

সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল হলো আলাউইত সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র, যা শিয়া ইসলামের একটি শাখা। এই শাখার সঙ্গে সাবেক আসাদ সরকারের রাজনৈতিক ও সামরিক অভিজাতদের অনেকেই জড়িত ছিল। গত সপ্তাহে আসাদের অনুগতদের ক্রমবর্ধমান বিদ্রোহের প্রতিক্রিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনী এই অঞ্চলে একটি অভিযান শুরু করে।
গত বৃহস্পতিবার উপকূলীয় শহর জাবলেহে বন্দুকধারীদের অতর্কিত আক্রমণে ১৩ জন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হওয়ার পর সহিংসতা আরো তীব্র হয়।

সিরিয়ার নতুন সরকারের বক্তব্য হলো, সাবেক সরকারের প্রতি অনুগত কিছু বিদ্রোহী এখনো রয়ে গেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ পালিয়ে যাওয়ার পর দেশটির শীর্ষ নেতা হন বিদ্রোহী দলগুলোর নেতৃত্ব দেওয়া হায়াত তাহরির আল শামের (এইচটিএস) প্রধান আহমেদ আল-শারা। সে সময় সিরিয়ার নিরাপত্তা রক্ষা বাহিনীর অনেকে বিদ্রোহী সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করলেও আসাদ সমর্থক সেনাদের কিছু দল আত্মসমর্পণ করেনি। তাদের শুরু করা বিদ্রোহ দমন করতে অস্ত্রধারীরা সেখানে ব্যবস্থা নিয়েছেন।
সিরিয়ার নতুন সরকারের অনুগত সশস্ত্র ব্যক্তিরাই আলাউইত সম্প্রদায়ের সদস্যদের মাঠে-ময়দানে হত্যা করেছে।

সহিংসতা বাড়লে নিরাপত্তা বাহিনী এই অঞ্চলে আরো সেনা পাঠায়, যাদের সঙ্গে বর্তমান সরকারকে সমর্থনকারী সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং ব্যক্তিরাও যোগ দেয়। তারা ওই অঞ্চলজুড়ে আলাউইতের অনেক শহর ও গ্রামে হামলা চালায়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছে, তারা প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে এবং বাড়িঘর ও দোকানপাট লুট করেছে।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের মুখপাত্র থামিন আল-খিতান বলেন, ‘সহিংসতার ভয়াবহ মাত্রা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, জাতিসংঘ কঠোর যাচাই পদ্ধতি ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত ৯০ জন বেসামরিক পুরুষ, ১৮ জন নারী, দুই মেয়ে এবং একজন ছেলেকে হত্যার বিষয়টি নথিভুক্ত করেছে।

প্রাথমিক প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, অপরাধীরা নিরাপত্তা বাহিনী এবং আসাদ সরকারের সমর্থনকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য ছিল। তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক বেশ কয়েকটি ঘটনায় নারী, শিশু এবং যুদ্ধে অবরুদ্ধ ব্যক্তিদেরসহ পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে, বিশেষ করে আলাউই শহর এবং গ্রামগুলোকে লক্ষ্য করে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের অফিস কর্তৃক সংগৃহীত অনেক সাক্ষ্য অনুসারে, অপরাধীরা বাড়িঘরে অভিযান চালিয়ে বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসা করে যে, তারা আলাউই নাকি সুন্নি, তারপর তাদের হত্যা করা হয় বা ছেড়ে দেওয়া হয়। বেঁচে যাওয়া কিছু ব্যক্তি আমাদের জানিয়েছেন, অনেক পুরুষকে তাদের পরিবারের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।’

খিতানের মতে, আসাদের অনুগতরা লাতাকিয়া, তারতুস এবং বানিয়াসের বেশ কয়েকটি হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়েছে। যার ফলে রোগী এবং চিকিৎসকসহ কয়েক ডজন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া হাসপাতালগুলোরও ক্ষতি হয়েছে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, মঙ্গলবার আরো ১৩২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়ার পর তাদের বেসামরিক লোকের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ২২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে বানিয়াস শহরে ৬২ জন নিহত হয়েছে। তাদের সূত্র অনুসারে, প্রায় ২৩০ জন নিরাপত্তা কর্মী এবং ২৫০ জন আসাদপন্থী যোদ্ধাও নিহত হয়েছেন।

খেতান বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান সিরিয়ার কর্তৃপক্ষকে দ্রুত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরো জোর দিয়ে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনের নিয়ম এবং মানদণ্ড অনুসারে, আইন লঙ্ঘনের জন্য দায়ি সকলকে তাদের সংশ্লিষ্টতা নির্বিশেষে জবাবদিহি করতে হবে। ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের সত্য, ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণের অধিকার রয়েছে।’

সরকার কর্তৃক গঠিত নতুন তদন্ত কমিটির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা ইতিমধ্যে প্রমাণ সংগ্রহ এবং পর্যালোচনা করছে এবং ৩০ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে।

ইয়াসের ফারহান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কমিটি সকল ফলাফল প্রতিষ্ঠাকারী সংস্থা, রাষ্ট্রপতি এবং বিচার বিভাগকে জানাবে।’

রাষ্ট্র পরিচালিত সানা সংবাদ সংস্থা আরো জানিয়েছে, ভিডিওতে শনাক্ত হওয়ার পর উপকূলীয় গ্রামে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত সহিংসতা চালানোর অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার পরিস্থিতি শান্ত ছিল, রাতভর কেবল বিক্ষিপ্ত গুলিবর্ষণের শব্দ শোনা গেছে।

তিন দিন আগে বানিয়াস শহর থেকে পালিয়ে আসা এক ব্যক্তি বিবিসিকে জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনী হত্যাকাণ্ড এবং লুটপাট রোধ করার জন্য আশেপাশে চেকপয়েন্ট স্থাপন করায় তিনি তার বাড়িতে ফিরে এসে খোঁজখবর নিতে সক্ষম হয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যক্তি আরো বলেন, গত সপ্তাহে বানিয়াসের রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো আর নেই। সিরিয়ান রেড ক্রিসেন্ট, নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে শহরের কবরস্থানে গণকবরে দাফন করছে বলে জানা গেছে।

তবে বেশিরভাগ পরিবার এখনও বাড়ি ফিরে আসেনি। যা ঘটেছে তাতে তারা মর্মাহত এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। অনেকে লাতাকিয়া শহরের বাইরে রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত হামিমিম বিমান ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছে, স্থানীয় স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে অথবা গ্রামাঞ্চলে পালিয়ে গেছে। অন্যরা পার্শ্ববর্তী লেবাননে পাড়ি জমায়। সেখানে একজন নারী বিবিসিকে জানিয়েছেন, সশস্ত্র লোকেরা দুই মাস আগে হামায় তার বাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে তার পরিবারের পুরুষদের হত্যা করেছে।

হিন্দ বলেন, ‘আমার ভাগ্নেদের বয়স ছিল ১১ এবং ১২ বছর। সশস্ত্র ব্যক্তিরা তাদের ঘিরে ধরে অন্য সকল তরুণ আলাউই পুরুষদের লাইনে দাঁড় করিয়েছিল। তাদের একজন তার বন্ধুকে আমাদের ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। সে বলেছিল, তারা আলাউই। এরপর বন্দুক তাক করে সকল পুরুষদের হত্যা করে।’

তিনি আরো বলেন, ‘তারা আমাদের দোষী মনে করে কারণ আমাদের প্রেসিডেন্ট আলাউই ছিলেন। কিন্তু সত্য হলো, আমরা সবচেয়ে দরিদ্র। আমাদের যুবকদের কেবল যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া এবং হত্যা করার জন্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল।’

উইসাম নামে এক যুবক বলেন, ‘সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে তিনি আর বিশ্বাস করেন না। তারা সবাই একই রকম। সশস্ত্র এবং মুখ ঢাকা। তাদের এমন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে যা অন্য কারও নেই। তারা যা ইচ্ছা তাই করে।’

সূত্র: বিবিসি

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ