1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১৯ অপরাহ্ন

দ্য গ্রেটেস্ট ইলেকশন শো অন দি আর্থ

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৭ নভেম্বর, ২০১২
  • ৬৪ Time View

আগামী চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউজের নতুন অধিকর্তা খুঁজে নেওয়ার মার্কিন নির্বাচনের দিন। সুপারস্টর্ম স্যান্ডির ভয়াল আঘাত সামলে নিতে না নিতেই রাষ্ট্রনায়ক নির্বাচনের এ গুরু দায়িত্ব এখন মার্কিন নাগরিকদের কাঁধে।

তাই যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই এখন শুধুই ওবামা-রমনি বিতর্ক। এ নির্বাচনকে বিশ্ববাসীর চোখে যে দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা হোক না কেন, “এটিই হচ্ছে দ্য গ্রেটেস্ট ইলেকশন শো অন দি আর্থ’। এটি নিছক কোনো নির্বাচন নয়। বরং বিশ্ব শাসনে নতুন নেতৃত্বের অঙ্গীকার পরখ করে নেওয়ার জটিল আর দুর্ভেদ্য সমীকরণের গণতান্ত্রিক লড়াই।”

এখানে ওবামা-রমনি কতটা মুখ্য যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কাছে তা কতটা বিবেচ্য? বরং মার্কিন রাষ্ট্র পরিচালনা আর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কোন রাষ্ট্রনায়কের খতিয়ান কতটা সুস্পষ্ট আর নির্ভরযোগ্য তার একটা চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই কৌশল এটি। এমন প্রশ্ন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনমুখর প্রতিটি মানুষের।

দেশের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, স্বরাষ্ট্রনীতি আর জনগণের স্বার্থ রক্ষায় মার্কিন নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণে দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ছুটে বেড়িয়েছেন দুজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। আর তাতে সাড়াও দিয়েছে মার্কিন জনগণ। তবে চূড়ান্ত পরীক্ষায় কার পাল্লায় কতটা ভোটের অঙ্ক জমা পড়বে তা দেখতে আরও নাটকীয়তা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে বিশ্ববাসীকে। তবে তা সুদীর্ঘ ক্ষণ নয়।

প্রসঙ্গত, ‘উই বিলিভ ইন চেঞ্জ’ এমন দিনবদলের বার্তাকেই জাদুমন্ত্র করে ২০০৮ সালের মার্কিন ক্ষমতার মসনদে বসেছিলেন ওবামা। সরকারি প্রশাসন, অর্থনীতি আর চাকরির বাজারকে চাঙ্গা করবেন এমন সব প্রত্যাশায় তরুণ প্রজন্মের দোদুল্যমান ভোট নিজের ব্যাংকে জমা নিয়েছিলেন। শুরুটা চলছিল ভালোই। কিন্তু এসব প্রতিশ্রুতিকে পাশ কাটিয়ে ওবামা পররাষ্ট্রনীতিতেই ঝুঁকে পড়লেন বেশি।

একের পর এক যুদ্ধে জড়িয়ে নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে অনেকটাই বিমুখ হয়ে পড়েন ওবামা। একদিকে সামরিক ব্যয়ের চাপ, অন্যদিকে বেকারত্বের কঠিন চ্যালেঞ্জকে সামলে উঠতে না পারায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনীতির দুষ্টুচক্রে ঘুরপাক খেতে থাকে। এতে ওবামার জনপ্রিয়তা একটা স্থায়ী ভাটা শুরু হয়। এরই মধ্যে নির্বাচন আসন্ন হয়ে পড়ে। মিট রমনি এসে দাঁড়ান সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার জানান দিয়ে।

এদিকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রতিনিধি রমনি নিজেকে গুছিয়ে আনতে শুরু করেন। নির্বাচনের একেবারে সপ্তাহ খানেক আগে ইতিহাসের ভয়ংকর হ্যারিকেন ‘স্যান্ডি’ যুক্তরাষ্ট্রের মেরুদণ্ডে আরও এক শক্ত আঘাত হানে। মুহূর্তেই দুমড়ে-মুচড়ে যায় মার্কিন প্রশাসনের স্বরাষ্ট্রনীতি। দেশের প্রত্যন্ত অঙ্গরাজ্যর সাধারণ মানুষ কতটা অসহায় হয়ে পড়েছে তা হয়ত স্যান্ডি না এলে বোঝাই যেত না।

ওয়াশিংটন ডিসি থেকে শুরু করে নিউইয়র্ক পর্যন্ত বিদুৎহীন রাতের অন্ধকারের নিমজ্জিত হয়। এমন দৃশ্য যেন মার্কিন নাগরিকেরা আগে কখনও অবলোকন করেননি। দেশটির কয়েকটি অঙ্গরাজ্য এখনও স্যান্ডির ক্ষতে জর্জরিত। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন নির্বাচনের পাল্লাট শেষপর্যন্ত ওবামা না রমনিকে বিজয়ী করবে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না মার্কিন রাজনীতির জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষকেরাও।

তবে কূটনৈতিক আর রাজনৈতিক বিশ্লেষণের কিছু সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা আপাতত রমনিকেই এগিয়ে রাখছে। ওবামা জনপ্রিয় হয়েছেন পরিবর্তনের কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে তা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বেড়েছে বেকারত্ব আর অর্থনৈতিক মন্দা।

গত চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই চাকরিচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ নাগরিক। অর্থাৎ অর্থনৈতিক টানাপোড়েন একেবারেই সামলে উঠতে পারেননি প্রতিশ্রুতিশীল ওবামা। আর তাই এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছেন পুরনো ভুলগুলো শুধরে নতুন কর্মযজ্ঞ ফিরিয়ে আনবেন যুক্তরাষ্ট্রে। তবে এখানে কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের কথা ওবামার বক্তব্যে সুস্পষ্ট হয়নি।

মার্কিন নির্বাচন-২০১২ এর ফলাফল যাই হোক না কেন, এবারের নির্বাচন মার্কিন ইতিহাসের বেশ কিছু দিকনিদের্শনা পরিবর্তনে এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা নির্বাচনী কৌশলকে ৫টি জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তুলে ধরেছেন।

(১) ব্যবসা কর কমানোর বিপরীতে ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রণোদনা
রাজনৈতিক বিতর্কের মঞ্চে ওবামা বলেছেন, ব্যবসার ওপর থেকে সব ধরনের আয়কর কমিয়ে আনা হবে। এখানে সম্ভাব্য এবং আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ নীতির বিপরীতে রমনি বলেছেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায় সুযোগ তৈরির কথা। এতে ব্যাপক আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে। এ খাতে রমনি ব্যাংকগুলোকে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার বিষয়ে উৎসাহিত করার প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন। মার্কিন ব্যবসা মঞ্চে ওবামার তুলনায় রমনি অনেকটাই পরীক্ষিত আর সফল।

(২) ১ কোটি ২০ লাখ চাকরির সুযোগ
ওবামা তার প্রতিটি বিতর্কে চাকরির সুযোগ তৈরির পুরনো বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। আর সঙ্গে তা করতে না পারার কথা স্বীকার করে ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার জন্য আরেকবার মার্কিন জনগণের সমর্থন চেয়েছেন। কিন্তু বেসরকারি খাতে অবাধ সুযোগ তৈরি করতে না করলে এত বিপুল পরিমাণ চাকরি শুধু প্রতিশ্রুতির ওপরই টিকে থাকবে না। এ নীতির বিপরীতে ব্যবসা পটু রমনি ছোট ছোট ব্যবসাকে চাঙ্গা করার প্রতি জোর দিয়েছেন। আর তাতে সরকারি সহায়তার অঙ্গীকার দিয়েছেন। ফলে এ কৌশলে কর্মসংস্থানের টানাপোড়েন থেকে মার্কিন নাগরিকেরা ঘুরে দাঁড়ানোর প্রকৃত পথ খুঁজে পাবে।

(৩) পাবলিক চাকরির বিপরীতে ব্যবসা পরিধি বাড়ানো
ওবামা বলেছেন, পাবলিক চাকরি প্রার্থীদের পূর্ণাঙ্গ সহায়তা করা হবে। কিন্তু সরকারি চাকরি ক্ষেত্র সম্প্রসারণ ছাড়া এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা আদৌ সম্ভব নয়। এখানে চাকরি প্রার্থীদের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্র তুলে ধরতে পারেননি ওবামা। এদিকে রমনি বলেছেন, বিদ্যমান ব্যবসা পরিসরকে আরও ঢেলে সাজালে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এতে চাকরি প্রত্যাশিতদের খুব বেশি দিন চাকরির জন্য অপেক্ষা বা হতাশায় ভুগতে হবে না।

(৪) চাকরির প্রার্থীদের সহয়তার বিপরীতে পেশাদারী দক্ষতা বাড়ানো
দক্ষতা বাড়ানো ছাড়া চাকরি প্রত্যাশীদের চলমান বিশ্ববাজারে কীভাবে চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব তা সুস্পষ্ট করেননি ওবামা। অর্থাৎ ২০০৮ সালের নির্বাচনের মতো শুধু চাকরি প্রার্থীদের সহায়তা করা হবে এমন কথাই জানিয়েছেন ওবামা। কিন্তু গেল আমলে কেন তা অর্জন করতে পারেননি তার সদুত্তর ওবামা তুলে ধরেননি। এদিকে রমনি সরাসরি চাকরির নিশ্চয়তা না দিয়ে পেশাদারি দক্ষতা বাড়াতে সরকার মহাপরিকল্পনার সঙ্গে সচেষ্ট উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছেন। এতে মার্কিন নাগরিকেরা আন্তর্জাতিক বাজারেও নিজেদের চাকরি নিশ্চিত করতে পারবেন বলে রমনি বক্তব্য রেখেছেন।

(৫) রাজস্ব ঘাটতি কমানো
এ নীতিতে ওবামা আর রমনি একই অবস্থানে। তবে কৌশলগত পরিকল্পনায় ওবামা এ খাতে চ্যালেঞ্জের তোপে আছে। আর রমনি তার ব্যবসায়ীক দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠান বেইন ক্যাপিটালকে ১১০ কোটি ডলার বিনিয়োগের বিপরীতে ২৫০ কোটি ডলার আয় অর্জন করে দেখিয়েছেন। ফলে সুবিন্যাস্ত পুনর্বিনিয়োগ করে আয় বাড়িয়ে ঘাটতি রাজস্ব বাড়াতে রমনির বেসরকারি অভিজ্ঞতা আছে। এদিকে ওবামা অর্থনীতির দুষ্টফাঁদে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছেন।

তবে জ্যেষ্ঠ মার্কিন রাজনীতিবিদদের সমীকরণে পররাষ্ট্রনীতি আর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মাঝে জনপ্রিয়তার বিচারে ওবামা পিছিয়ে নেই। এ ছাড়াও যুদ্ধনীতিতে ওবামা বা রমনির মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছেন না নির্বাচনী বিশ্লেষকেরা। মার্কিন স্বার্থের সঙ্গে টেকসই হয় এমন যেকোনো আক্রমণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পিছপা হওয়ার ইতিহাসে নেই বলেই অভিমত দিয়েছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।

সব মিলিয়ে চূড়ান্ত ফলাফলের ওবামা কিংবা রমনির জয়ে মার্কিন নীতিতে আমূল কোনো পরিবর্তনের আভাস নেই। তবে বিশ্বের সব দেশের সাধারণ মানুষের এ নির্বাচন থেকে দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণেই বিশ্বের আগামী চার বছরের রাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক পটভূমিতে এ নির্বাচনকে ‘দ্য গ্রেটেস্ট ইলেকশন শো অন দি আথর্’ বলে অভিহিত করছে শীর্ষ গণমাধ্যমগুলো।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ