1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৩ অপরাহ্ন

যুদ্ধবিরতি নিয়ে অচলাবস্থার মধ্যেই গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ ইসরায়েলের

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৩ মার্চ, ২০২৫
  • ২১ Time View

গতকাল রবিবার গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশে বাধা দিয়েছে ইসরায়েল। হামাস এ বিষয়ে মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। গাজা উপত্যকায় সকল মানবিক সাহায্য প্রবেশে বাধা দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি আরব রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়েছে।

মিসর এবং কাতার জানিয়েছে, রবিবার ইসরায়েলি পদক্ষেপ যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, অন্যদিকে জাতিসংঘের মানবিক প্রধান টম ফ্লেচার এটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, তার দেশ এই পদক্ষেপ নিয়েছে কারণ হামাস সরবরাহ চুরি করছে এবং ‘তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে অর্থায়নের জন্য’ ব্যবহার করছে। তিনি ফিলিস্তিনি এ গোষ্ঠীকে গাজায় যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার জন্যও অভিযুক্ত করেছেন।

রবিবার এক বিবৃতিতে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলি সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা এটিকে ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন’ এবং ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন’ বলে বর্ণনা করেছে।
মিসরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ করেছে। কাতার এবং মিসর উভয়ই গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করতে সহায়তা করেছে।

এদিকে, সৌদি আরব ইসরায়েলি সাহায্য অবরোধের নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল টম ফ্লেচার এক্স-এ একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন স্পষ্ট, আমাদের গুরুত্বপূর্ণ জীবন রক্ষাকারী সাহায্য সরবরাহের জন্য প্রবেশাধিকার দিতে হবে।

নেতানিয়াহু বলেন, ‘হামাস রসদ চুরি করে এবং গাজার জনগণকে তা পায় না বলে ইসরায়েল এই পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই রসদ ব্যবহার করে তারা তাদের সন্ত্রাসী চক্রকে অর্থায়ন করে, যার লক্ষ্য সরাসরি ইসরায়েল এবং আমাদের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা। আমরা এটি মেনে নিতে পারি না।’

তবে হামাস পূর্বে গাজায় মানবিক সাহায্য চুরি করার কথা অস্বীকার করেছে। নেতানিয়াহু আরো বলেছেন, হামাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির অস্থায়ী বর্ধিতকরণ মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।

পণ্য স্থগিতাদেশের বিষয়ে মন্তব্য করে হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি রয়টার্সকে বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত যুদ্ধবিরতি আলোচনার ওপর প্রভাব ফেলবে।’ ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উত্তেজনা প্রশমন এবং যুদ্ধবিরতি কার্যকর রাখার উপায় নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি প্রতিনিধিদল কায়রোতে পৌঁছাবে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর এর আগে জানিয়েছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের রমজান ও পাসওভারের সময় গাজায় অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। পূর্বে সম্মত যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক ঘন্টা পর এই প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

যদি তারা একমত হয়, তাহলে ৩১শে মার্চের দিকে রমজানের রোজার শেষ সময় এবং ২০শে এপ্রিলের দিকে ইহুদিদের পাসওভার ছুটির দিন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি থাকবে। স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যদি কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো যায়, তাহলে হামাস প্রথম দিনেই জীবিত ও মৃত জিম্মিকে মুক্তি দেবে এবং এই শর্তে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।

হামাস বলেছে, তারা মূলত যুদ্ধবিরতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা দ্বিতীয় পর্যায়ে যাওয়ার জন্য নির্ধারিত ছিল। তাদের লক্ষ্য যুদ্ধের স্থায়ী অবসান ঘটানো, কিন্তু প্রথম ধাপে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির সাময়িক বর্ধনের ধারণাটি তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।

হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মাহমুদ মারদাউই আল জাজিরাকে বলেন, ইতিমধ্যেই সম্মত হওয়া ধাপে ধাপে চুক্তির শর্তাবলী অনুযায়ী হামাস কেবলমাত্র অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেবে।

শুক্রবার মিসরীয় সূত্র জানিয়েছে, কায়রোতে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল প্রথম ধাপের মেয়াদ ৪২ দিন বাড়ানোর চেষ্টা করেছে, অন্যদিকে হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে যেতে চায়। মুখপাত্র হাজেম কাসেম শনিবার বলেছেন, গোষ্ঠীটি প্রথম ধাপ বাড়ানোর ইসরায়েলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে, হামাস ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে এবং পাঁচজন থাই নাগরিককে অনির্ধারিত মুক্তি দেয়। যার বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি এবং গাজার কিছু জায়গা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হয়।

মূল চুক্তির অধীনে, দ্বিতীয় পর্যায়ের লক্ষ্য ছিল বাকি ৫৯ জন জিম্মিকে মুক্তি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং যুদ্ধের চূড়ান্ত সমাপ্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করা। তবে আলোচনা কখনও শুরুই হয়নি এবং ইসরায়েল বলেছে, যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে সকল জিম্মিকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

এদিকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, উত্তর এবং দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় পৃথক হামলায় ইসরায়েলি বন্দুকধারীদের গুলিতে চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, উত্তর গাজায় তাদের সেনারা সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করেছে। তারা আরো জানিয়েছে, ‘হুমকি দূর করার জন্য’ এ বিমান হামলা চালানো হয়েছে।

এ বিষয়ে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় সকল পণ্য ও সরবরাহ প্রবেশ বন্ধ করা হবে। ‘আমাদের জিম্মিদের মুক্তি ছাড়া ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি অনুমোদন করবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘যদি হামাস তাদের অবস্থানে অটল থাকে, তাহলে আরো খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হবে।’ এদিকে
হামাস ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ এবং ‘চুক্তির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অভ্যুত্থান’ বলে নিন্দা জানিয়েছে।

হামাস জানিয়েছে, ‘আমরা মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে তারা চুক্তির অধীনে সকল পর্যায়ে তাদের বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য দখলদারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করুক।’ তারা আরো বলেছে, ‘জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায় হবে চুক্তি মেনে চলা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য আলোচনা শুরু করা।’

সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ