1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২০ পূর্বাহ্ন

ফার্মগেটে ৩০ নারীর ফাঁদ!

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১২
  • ৫৮ Time View

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা। ঈদে বাড়ি যাওয়া হবে না বলে ফার্মগেটে বেড়াতে আসেন বেসরকারি এক কোম্পানির নিম্নপদস্থ কর্মচারী হাফিজুর রহমান। ফার্মগেটে বোরকা পরা এক নারী তাকে ইশারা করেন।

ইশারার ভাষা বুঝতে দেরি হয় না হাফিজুরের। সঙ্গে সঙ্গে রাজিও হয়ে যান। একসঙ্গে রিকশায় ওঠেন। উদ্দেশ্য নিরাপদ গন্তব্যস্থল। মাঝের ৩০ মিনিট পর ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের সামনে এসে হাফিজুর রহমানের কান্নাকাটি।

লোকজনের জটলা। কৌতুহল বশত এই প্রতিবেদকও সেখানে উপস্থিত হন। কান্নার কারণ হাফিজ প্রথমে বলতে না চাইলেও পরে বলেন এক অভিনব প্রতারণার কাহিনী।

পুরুষ শিকারী বোরকা পরা নারীর খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন এই হাফিজ। তার কান্নার আরও বড় কারণ, ঈদের বোনাসেরও টাকা ছিল মানিব্যাগে। সব খুইয়েছেন তিনি, সঙ্গে মোবাইল ফোনসেটও। পরে ওই নারীকে অনেক খুঁজেও পাওয়া যায়নি। কান্নাকাটি করে অবশেষে শূন্য পকেটেই বাসায় ফেরেন হাফিজ।

এ ঘটনার পর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ফার্মগেটের বোরকা পরা নারীর প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য।

পুরো ফার্মগেট এলাকায় সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রায় ৩০ বোরকা পরা নারী থাকে। তাদের কাজ হলো পুরুষ শিকার করা। তাদের মধ্যে একজন দলনেত্রী। সে অবশ্য রাস্তায় নামে না।

লতা নামের ওই দলনেত্রী আনন্দ সিনেমা হলের ভেতরে অথবা বাইরে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে দু’একজন সঙ্গী নিয়ে বসে থাকে। তার দলের যারা যেখানে হাতিয়ে নেয়, তারা সবাই তার কাছে সব টাকাই জমা দেবে। নির্দিষ্ট সময়ে সবাই তার কাছে হাজির হয়। ওই সময় সে সবাইকে টাকা ভাগ করে দেয়।

এই ৩০ জনের সিন্ডিকেটের বাইরে এখানে কেউ আসতে পারবে না। কেউ যদি আসতেও চায়- তবে ওই লতাকে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা দিয়ে তারপর লাইনে আসতে হবে।

জানা গেছে, এই লতা কাউকে পরোয়া করে না। এ কারণে ফার্মগেটের কাউকে সে চাঁদাও দেয় না। তবে পুলিশকে ছাড়া যেহেতু এই কাজ সম্ভব নয়, সেহেতু শুধুমাত্র পুলিশকেই টাকা দেয় লতা।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, তাদের ব্যবসা করতে হলে চাঁদা দিতে হয়। কিন্তু লতা পুলিশ ছাড়া কাউকে চাঁদা দেয় না।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, লতার সবচেয়ে কাছের হলো লাবনী। এই দলের অন্যদের মধ্যে রয়েছে হিরা, লাকি, সালমা, পারুল ও সুলতানা।

এরা প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ফার্মগেটে থাকে। অবশ্য বিকেলে বোরকা পার্টির বাইরে অন্যরাও আসে। তবে তারা ওই লতাকে ম্যানেজ করেই আসে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আকবর হোসেন বলেন, সম্প্রতি এক ছাত্র এই রকমভাবে তাদের শিকার হয়ে টাকা পয়সা খুইয়ে কান্নাকাটি করে চলে গেছেন। এছাড়া অনেকে মান-সম্মানের ভয়ে সবকিছু সহ্য করে চলে যান। প্রতিদিন এখানে অনেক সাধারণ মানুষ তাদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হন।

ইশারায় কাছে ডাকা
প্রথমে তারা লোকজনকে ইশারায় ডাকে। এরপর কেউ সাড়া দিলে তার সঙ্গে হয় দরদাম। তারা সংশ্লিস্ট খদ্দেরের পছন্দমতো জায়গায় কখনোই যেতে রাজি হয় না। তাদের পছন্দের জায়গায় যাওয়ার জন্য বলেন। অল্প টাকার লোভ দেখানোর কারণে অনেকেই রাজি হয়ে যান। এরপর তারা রিকশা ঠিক করে তেজগাঁও কলেজের পেছনের গলিতে নিয়ে গিয়েই টাকা দাবি করেন। ওই সময়ে কেউ টাকা না দিতে চাইলে লোকজন ডাকাডাকি করার ভয় দেখিয়ে নির্ধারিত টাকার চেয়ে বেশি অর্থাৎ পকেটে যা থাকে, মোবাইলসহ নিয়ে নেন। পরে এক সময় ওই নারী রিকশা থেকে নেমে গলির ভেতরে ঢুকে যান। এভাবেই চলে তাদের পুরুষ শিকারের ফাঁদ। রাস্তার লোকজন এগুলো দেখেও না দেখার ভান করেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রশাসনের লোকজন ইচ্ছা করলেই একদিনের মধ্যে তাদের উৎখাত করতে পারে। কিন্তু তাদের সঙ্গে সখ্যের কারণে কিছু বলেন না। আর প্রশাসনের উচিত এদের ব্যাপারে কঠোর হওয়া।

এ ব্যাপারে  তেজগাঁও থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, “আমরা এদের ব্যাপারে প্রতিদিনই কাজ করি। এদের ওই স্থানে দেখামাত্র পুলিশ ধাওয়া করে।”

তিনি বলেন, “এরা বারবার এখানে ফিরে আসে।’’

তবে ওদের কাছ থেকে কোনো প্রকার উৎকোচ পুলিশ নেয় না বলে দাবি করেন ওসি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ