1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৩২ পূর্বাহ্ন

বন্ধুদের নাফিস, এফবিআইর নাফিস

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১২
  • ৫৭ Time View

নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার কথিত ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বাংলাদেশি তরুণ কাজী মোহাম্মদ রেজোয়ানুল আহসান নাফিসকে (২১) আটক করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই।

কিন্তু নাফিসকে এফবিআই যেভাবে সন্ত্রাসী প্রমাণের চেষ্টা করছে এবং তার বিরুদ্ধে আল কায়েদা-সংশ্লিষ্টতার দাবি করা হচ্ছে, তার সঙ্গে মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়কার নাফিসের বিস্তর তফাৎ। সেখানে তার বন্ধুরা বলছেন, নাফিস খুবই ধর্মপ্রাণ মুসলিম এবং তিনি ধর্মের নামে সহিংসতাকে ঘৃণা করেন। তাকে শান্ত, ভদ্র, নিরীহ এবং সত্যিকার মুসলমান বলেই তারা জানে।

এফবিআই দাবি করছে, নাফিস ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক উড়িয়ে দিতে এক হাজার পাউন্ডের বিস্ফোরক সমেত একটি গাড়িবোমা ফাটানোর ষড়যন্ত্র করেছিলেন। যে কাজে তাদেরই (এফবিআই) একজন চর সহায়তা করে। যে নিজেকে নাফিসের কাছে আল কায়েদার সহযোগী বলে উপস্থাপন করেছিল।

এছাড়া নাফিসের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আল কায়েদার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলেও দাবি করেছে এফবিআই। যদিও এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ তারা অভিযোগে উল্লেখ করেনি।

কিন্তু নাফিস সম্পর্কে বন্ধুদের বর্ণনা এফবিআইয়ের দাবিকে নাকচ করে দেন।

মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় জিম ডাউ নামে ৫৪ বছর বয়সী এক সেনা কর্মকর্তা এবং ক্লাসমেটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল নাফিসের। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন তিনি ক্লাস শেষে নাফিসের সঙ্গে বাসায় ফিরতেন। ফেরার পথে তাদের মধ্যে অনেক বিষয় নিয়ে কথা হতো।

নাফিসকে সন্ত্রাসী সন্দেহে আটক করার ঘটনায় তিনি বিস্মিত। তিনি বলেন, “আমি কল্পনাই করতে পারি না, এমন একজন মানুষ এরকম কাজ করতে পারে। এই ছেলেটির সঙ্গে সপ্তাহে শুধু দুই দিন সাক্ষাৎ হতো তা-ই নয় তার সঙ্গে আমার অনেক কথা হতো…কথাবার্তায় আমার কখানো মনে হয়নি সে এমন চরিত্রের মানুষ।”

এদিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা নাফিসের বাবা কাজী মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, তার ছেলেকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে। তার ছেলে এতোটাই শান্ত নিরীহ যে সে একা ছাদেও যেত না।

যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন, নাফিস আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের খুবই ভক্ত। আল কায়েদার একটি সাময়িকীতে সে তার হামলা পরিকল্পনা নিয়ে একটি নিবন্ধও লিখেছে। সেখানে নাফিস এও বলেছেন, তিনি শহীদ হতে চান তবে তার আগে বাংলাদেশে পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করার ইচ্ছে তার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ওপর হামলা এবং নিউইয়র্কের স্টক এক্সচেঞ্জে হামলার পরিকল্পনাও নাফিসের ছিল বলে দাবি করেছেন ওই কর্মকর্তা।

এফবিআই বলেছে, নাফিস যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হামলা করার পরিকল্পনা করছেন এমন সংবাদের ভিত্তিতে তারা তার পেছনে চর লাগিয়ে দেন। আল কায়েদা সদস্যের ছদ্মবেশে ওই চরই পরে নাফিসকে নানাভাবে হামলার জন্য প্ররোচনা দেয়। ফেডারেল ব্যাংকে হামলার জন্য নকল বিস্ফোরক সরবরাহকারীও সেই চর। অপরাধী ধরার এ কৌশলকে বলে স্টিং অপারেশন যা খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই বেশ বিতর্কিত।

গত বুধবার নাফিস যখন আটক হন তখন তিনি ম্যানহাটনের একটি রেস্টুরেন্টে বাসবয় হিসেবে কাজ করতেন। তাকে আটকের পর ব্রুকলিনের একটি আদালতে তোলা হলে আদালত জামিন অযোগ্য ঘোষণা করে তাকে কারাগারে পাঠান।

এ ব্যাপারে অবশ্য নাফিসের আইনজীবী হেইডি সিজার তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে নাফিসের সঙ্গে এফবিআই চরের সহযোগিতার অভিনয় এবং বিতর্কিত স্টিং অপারেশন নিয়ে অনেক আইনজীবীই সমালোচনা করেছেন। তারা একে ফাঁদ বলেই অভিহিত করেছেন।

এদিকে তদন্তকারীরা এটাও স্পষ্ট করে বলেনি, নাফিসের সঙ্গে এফবিআইয়ের ওই চরের যোগাযোগ হলো কীভাবে।

নাফিস উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি দেন গত বছরের জানুয়ারিতে। মিসৌরিতে সাউথইস্ট মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। সেখানে তিনি মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং নিয়মিত মসজিদে যেতেন।

কিন্তু এক সেমিস্টার সম্পন্ন করার পর তিনি ব্রুকলিনের একটি স্কুলে ট্রান্সফারের আবেদন করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই স্কুলের নাম বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

সাউথইস্ট মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে নাফিসের ক্লাসমেট জিম ডাউ বলেন, “নাফিস ওসামা বিন লাদেনের খুব প্রশংসা করতো।” একই সঙ্গে তিনি এও বলেছেন, “সে আমাকে বলেছে, তার দৃঢ় বিশ্বাস বিন লাদেন টুইন টাওয়ারে হামলা করেননি। কারণ সে মনে করে, বিন লাদেন একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ। আর একজন ধার্মিক মানুষ কখনো এমন কাজ করতে পারেন না।”

ডাউ আরো জানান, নাফিস তাকে একটি কোরআন শরিফ দিয়ে তা পড়ার অনুরোধ জানিয়েছিল। ডাউ জোর দিয়ে বলেন, “কিন্তু সে কখনো রাগ বা উত্তেজনা বশে এমন কোনো পাগলামি করার মতো কথা বলেনি।”

তিনি আরো বলেন, “যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি হতবিহ্বল করেছে তা হলো, সে খুব সুনির্দিষ্টভাবেই আমাকে বলত, সত্যিকারের মুসলমান কখনো সহিংতায় বিশ্বাস করেন না।”

মিসৌরির সেন্ট লুইসের বাসিন্দা ডিওন ডানক্যান মিসৌরির ওই মুসিলম ছাত্র সংগঠনের একজন সদস্য। তিনি বলেন, “নাফিস খুবই ভালো ছেলে। তার মধ্যে আমেরিকা বিরোধী মনোভাবের বা আমেরিকানদের হত্যা বা এমন কিছু করার মতো মনোভাবের লেশমাত্র নেই। সে খুব বিশ্বাসযোগ্য এবং সৎ একটা ছেলে।”

তিনি আরো বলেন, “সে খুবই নম্র, ভদ্র ও সহযোগিতার মনোভাব সম্পন্ন। একজন ভাল মুসলমান ছেলের কাছ থেকে আপনি যা আশা করেন তার সবই তার মধ্যে আছে। সে দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত।”

এফবিআই ও নিউইয়র্ক পুলিশের অভিযোগে বলা হয়েছে, নাফিস তার সহযোগীর কাছ বারবার নিশ্চয়তা চাইতেন যে, আল কায়েদা তাকে এ হামলা পরিকল্পনায় সাহায্য সমর্থন দেবে কি না।

এফবিআইয়ের দাবি অনুযায়ী কুইনসের একটি হোটেলে তাদের কথপোকথনের রেকর্ড থেকে জানা যাচ্ছে, নাফিস বলছেন, ‘আমি যে বিষয়টি তোমার কাছ থেকে জানতে চাই তা হলো- আমি যা করছি তাতে কি আল কায়েদার সমর্থন আছে?’

গত সেপ্টেম্বরে একই হোটেলে নাফিস ওই চরকে বলেন, এই হামলার সময় সে আত্মঘাতী হওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু এ কাজ করার আগে সে বাংলাদেশে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চায়।

এসব কথা মার্কিন কর্তৃপক্ষের অভিযোগে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু নাফিস আল কায়েদার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বা এ হামলা পরিকল্পনায় তারা নির্দেশনা দিচ্ছে- এর সপক্ষে এফবিআই বা পুলিশ এখনো সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ