1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১২ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে: ড. সালেহউদ্দিন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত : নৌপরিবহন উপদেষ্টা হাসিনা-কামালের আমৃত্যু কারাদণ্ড বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল ২০২৪-কে ১৯৭১-এর মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করি : মাহফুজ আলম ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যকে জাতীয় শক্তিতে পরিণত করতে হবে : সালাহউদ্দিন আহমদ হাদিকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সিঙ্গাপুরের পথে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে ডাকসুর মার্চ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নির্বাচনে প্রভাব পড়বে না : সিইসি বিজয় দিবসে ৪০ মিনিট বন্ধ থাকবে মেট্রোরেল চলাচল হাদিকে সিঙ্গাপুর নিতে ঢাকায় এসেছে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স

ঘূর্ণিঝড় দুর্গত এলাকা বিধ্বস্ত জনপদ, বিপন্ন মানবতা

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১২
  • ৯৫ Time View

সারি সারি গাছ  রাস্তার উপর পড়ে আছে এলোপাতাড়ি হয়ে। গাছের সঙ্গে বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে থাকতে দেখা গেছে কোথাও কোথাও। কোন বাড়ির টিনের চাল উড়ে গেছে ঝড়ের তাণ্ডবে। কোথাও আবার গাছ পড়েই হেলে গেছে ঘরের একপাশ। চোখ ফেললেই একই দৃশ্য পুরো হাতিয়া জুড়ে। উপজেলা হেডকোয়ার্টার ওছখালি থেকে নির্ভৃত জনপদ চরকিং কিংবা সাগরিয়াতেও।

হাতিয়ার নলচিরা ইউনিয়নের দাসের হাট গ্রামের দৃশ্য খুবই মর্মান্তিক। দেখে মনে হবে বিধ্বস্ত কোন জনপদ। বাড়ির আঙ্গিনায় পা ফেলার জায়গাটুকুও ঠিক নেই। চারপাশ থেকে গাছ পড়ে, ঘরের খুঁটি ভেঙ্গে একাকার হয়ে আছে। কোন কোন বাড়িতো বিরান হয়ে গেছে একেবারেই। দৃশ্য মর্মান্তিক!

উপকুলীয় অঞ্চল হাতিয়ায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বুধবার মাঝ রাতে। মানুষজনকে ঘুমে রেখেই কেড়ে নেয় বেশ ক’টি প্রাণ। তারচেয়েও করুণ বিষয়, এখনো খুঁজে পাওযা যাচ্ছে না কয়েকশ’ মানুষ। কোথায় আছে, কেমন আছে, নাকি ঝড়ের তোড়ে হারিয়ে গেছে পাত্তা নেই।

স্বজন হারানোর বেদনায় ভারী হয়ে আছে হাতিয়ার বাতাস। অনেকেই ধারণা করছেন, প্রিয় মানুষটি ঘূর্ণিঝড়ের তোড়ে হারিয়ে গেছে নদীর গহীনে। ফিরে আসবেন না আর কোনদিন। এদিকে, শুক্রবার সকাল থেকেই ফিরে আসতে শুরু করেছেন নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা। হাতিয়ার নলচিরা ঘাট, রহমবাজার ঘাট, কাজিরবাজার ঘাট, বাংলাবাজার ঘাট, তমরদ্দি ঘাট, নিঝুম দ্বীপ ঘাট দিয়ে হারিয়ে যাওয়া জেলেদের কেউ কেউ ফিরে আসছেন।

কিন্তু তাদের সংখ্যা হারিয়ে যাওয়া মানুষের তুলনায় অনেক কম। শুক্রবার রাত নেমে আসা পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন হাজারেরও বেশি জেলে। এমন মন্তব্য স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল আজিমের। সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, “প্রকৃত নিখোঁজের সংখ্যা স্পষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে যেহেতু শতাধিক ট্রলার এখনো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাই বলা যায় এক হাজার জেলেরও কোন খবর নেই।”

বাড়ছে নিখোঁজের সংখ্যা

এদিকে শুক্রবারে নতুন করে আর কোন মৃতদেহের সন্ধান না পাওয়া গেলেও ক্রমশ বাড়ছে নিখোঁজের সংখ্যা। তবে মাঝে মাঝে হঠাৎ করেই গুজব উঠছে, কোন কোন স্থানে মৃতদেহের দেখা পাওয়া গেছে। বিকেলে লোকমুখে শোন যায়, হাতিয়ার  কেয়ারিং চরে ৮ থেকে ১০ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। তবে তাৎক্ষণিক বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে দিনভর বুড়িচরে ৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনা ছড়ানো হলেও দিনের শেষে এসে এর কোন তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা বলছেন, কার মৃতদেহ কোথায় ভেসে উঠবে, সেটা বলা যাচ্ছে না। এতো মানুষ নিখোঁজ আছে, মৃতের সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।

অপ্রতুল ত্রাণ

ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য প্রশাসনের সহায়তায় অপ্রতুলতার অভিযোগ রয়েছে শুরু থেকেই। ঘুর্ণিঝড়ের দিন খবর পেয়ে স্থানীয় এমপি ফজলুল আজিম ছুটে এলেও জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কোন কর্মকর্তাই আসেননি বিপন্ন এই জনপদে। একদিন পরে শুক্রবার সি-ট্রাকে করে জেলা প্রশাসক অনেকটা আনন্দ ভ্রমণে এসেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন হাতিয়াবাসী।

জেলা প্রশাসক মো. সিরাজুল ইসলাম দুপুরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে হাতিয়া উপজেলাবাসীর সঙ্গে এক মতবিনিময়ে মিলিত হয়ে জেলা প্রশাসন থেকে দুর্গতদের জন্য ৫০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ একলাখ টাকা ত্রাণ বিতরণের ঘোষণা দেন। এই ত্রাণ কখন এসে পৌঁছাবে তার কোন নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি জেলা প্রশাসকের বক্তব্যে।

তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহিদুর রহমান জানান, “আমরা এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বাত্মক সচেষ্ট রয়েছি। আমরা চাইছি যত দ্রুত সম্ভব, ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে। ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা যতো কমিয়ে আনা যায়, ততোই মঙ্গল।”

অসহায় জীবনযাত্রা

সরিজমেন পরিদর্শনে দেখা যায়, হাতিয়া উপজেলার চরকিং, সোনাদিয়া, বুড়িরচর, তমরদ্দি, চরঈশ্বর, নিঝুমদ্বীপসহ বিভিন্ন এলাকা ঝড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে আছে। এসব এলাকায় বেড়ি বাধের বাইরে বসবাসকারী কয়েক হাজার পরিবার এখন অনেকটা খোলা আকাশের নিচে অসহায় দিন কাটাচ্ছে। অনেক পরিবারকেই খাদ্যাভাবে ভুগতে দেখা গেছে। সাংবাদিকদের কাছে পেয়েই কেঁদে ফেলেন তারা।

চরঈশ্বরের মজিনা খাতুন বলেন, “আঙ্গোরে দেইখতে কেউ আসে নাই। ঘর বাড়ি সব হারাইছি, অন কেমনে দিন কাটাইতাম হেই খোঁজ কেউ লয় না। মাথা গুজাইবার জায়গা নাই। এইক (এমন) জীবনেরতুন মরি যান ভালা।” এমন অভিযোগ শোনা যায় আরো অনেকের কাছ থেকে।

চরকিং ইউনিয়নের দাসের হাট এলাকার রাজেন্দ্র কুমার বলেন, “আমার বাড়ি ঘর সব তছনছ হই গেছে। পানের চাষ কইরতাম, বাতাসে সব উড়াই লই গেছে। কেউ আঙ্গোরে তুফানের খবর জানায় নো। আঙ্গো সব কিছু শেষ হই গেছে।”

মানুষের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পুরো হাতিয়ার চিত্র। সবখানেই কেবল অসহায়ত্বের ধ্বনি ভেসে বেড়াচ্ছে। দুর্গতরা মনে করছেন, এমন অবস্থায় প্রশাসনকে আরো সক্রিয় হলেই দুর্যোগ দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যাবে।

বিধ্বস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও

ঝড়ে পুরো হাতিয়ায় অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। জানা গেছে উপজেলার বুড়িরচর রেহানিয়া নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায় বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিল্লুর রহমান। একইভাবে খাসেরহাট মাজেদিয়া দাখিল মাদ্রাসাও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায় বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির তত্বাবধায়ক জাফর ইকবাল।

এমন চিত্র দেখা গেছে উপজেলার আরো কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বৃহস্পতিবার অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদান পদ্ধতি বন্ধ ছিল। তবে কোন কোন বিদ্যালয়ে পরীক্ষা থাকায় খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়েছে বলে জানা যায়।

এদিকে, পুরো পুরো ধ্বংস হয়ে যাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবার স্বাভাবিক শিক্ষাদান ব্যবস্থা চালু হতে বেশ দেরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা।

বিছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা

ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই সাময়িক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে হাতিয়ার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। ঝড়ে হাতিয়ার অর্ধশতাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে পড়েছে বলেই দাবি অনেকের। বৃহস্পতিবার উপজেলার প্রধান পয়েন্ট ওছখালির আংশিক স্থানে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। পাশ্ববর্তী উকিল পাড়া, মাস্টার পাড়াতেও শনিবারের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পুণস্থাপন  করা হবে বলে জানান বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী গাজী গিয়াস উদ্দিন।

তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার ১০ জন শ্রমিক এবং শুক্রবার আরো ১০ শ্রমিক নিয়ে দ্রুত কাজ চালানো হচ্ছে। শনিবার ঠিকাদাররা তাদের কাজ শুরু করবে।”

আগামী ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে পুরো উপজেলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

এখন কেবল অপেক্ষা…

এমন আকস্মিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে আবার বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন হাতিয়ার সংগ্রামী মানুষ। তারা মনে করেন, দুর্যোগ আসবেই, তবে তার মোকাবেলা করতে পারাটাই প্রকৃত স্বার্থকতা। উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা খানম বলেন, “আমরা আবার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় চালিয়ে যাচ্ছি। এখন কেবল অপেক্ষার পালা। খুব স্বল্প সময়ে এমন পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে পারবো।”

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ