রমনির আত্মঘাতী বেফাঁস মন্তব্য একের পর এক প্রকাশ হয়ে পড়ায় জনমত জরিপে ওবামার সমর্থন হুহু করে বেড়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার দিনের শেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও এনবিসি নিউজের সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা গেছে ওবামার জনসমর্থন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। গত মার্চের পর এই প্রথম ওবামার সমর্থন ৫০ শতাংশে উন্নীত হলো বলে জানা গেছে। আর ওবামার চেয়ে ৫ শতাংশের ব্যবধানে পিছিয়ে আছেন রমনি। অথচ গত সপ্তাহেই দু’জনের পক্ষে জনমত ছিলো প্রায় সমান।
বিতর্কিত মন্তব্য সম্বলিত ভিডিও টেপ ফাঁস হওয়ার পর থেকেই মূলত রমনির জনপ্রিয়তা কমে যাচ্ছে আর সমর্থনের পাল্লা ভারী হচ্ছে ওবামার।
এদিকে তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে আয়োজিত ব্যক্তিগত ভোজসভায় বেখেয়ালে নিজের মনের কথা প্রকাশ করে ফেঁসে যাওয়া রমনি আবারও নতুন করে বেকায়দায় পড়েছেন।
গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা তার বিতর্কিত মন্তব্যের আরও ভিডিও টেপ মঙ্গলবার প্রকাশ হয়ে পড়লে পুনরায় বিব্রতকর পরিস্থিতির সামনে পড়েন তিনি।
সর্বশেষ ফাঁস হওয়া ভিডিও টেপে ফিলিস্তিনিদের প্রতি বিরুপ মন্তব্য করেন তিনি। এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছেন রমনি। ফাঁস হওয়া ভিডিওতে রমনি বলেন, “ফিলিস্তিনিরা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি চায় না।” ভিডিও ক্লিপে ধারণ করা বক্তব্যে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে রমনির দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ফিলিস্তিন বিদ্বেষে ভরপুর ছিলো বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।
উল্লেখ্য, নির্বাচনী প্রচারণার তহবিল সংগ্রহের জন্য ফ্লোরিডায় এক ধনী সমর্থকের বাড়িতে আয়োজিত ঘরোয়া ভোজসভায় দেওয়া রমনির বক্তব্য গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিওতে ফাঁস হয়ে পড়ে। প্রথম ভিডিও ক্লিপটিতে মার্কিন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি করা রমনির বিতর্কিত মন্তব্য প্রকাশ পায়।
রমনির বক্তব্য সম্বলিত পুরো ভিডিওটিই প্রকাশ করেছে উদারপন্থি অনুসন্ধানী সাময়িকী মাদার জোনস। ভিডিওটি দেখা যাচ্ছে মাদারজোনস.কম ওয়েব সাইটে।
তবে নিজের বেফাঁস মন্তব্যের জন্য অনুতাপ প্রকাশ না করে উল্টো নিজের বক্তব্যের সমর্থনে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেছেন রমনি।
মঙ্গলবার ফক্সকে দেওয়া সাক্ষাতকারে ওবামা সমর্থক ৪৭ শতাংশ ভোটারের ব্যাপারে করা নিজের উক্তিতে অটল থাকেন তিনি। মূলত আয়করের আওতায় না পড়া ৪৭ শতাংশ মার্কিনীকে উদ্দেশ্য করেই এ মন্তব্য করেন তিনি।
কাকতালীয়ভাবে গত সপ্তাহে ওবামার পক্ষে জন সমর্থন ছিলো ৪৭ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাক্স পলিসি সেন্টারের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬ দশমিক ৪ শতাংশ লোক আয়করের আওতায় পড়েন না।
মঙ্গলবার ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি আবারও আয়করের সীমানার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “বারাক ওবামার সমর্থক এসব লোক আমাকে কখনই ভোট দেবে না।”
তিনি বলেন, “আমি সেই সব ব্যক্তির ব্যাপারে কথা বলছি, যারা আমাকে সাধারণত সমর্থন করে না।”
নির্বাচনী লড়াইয়ে জিততে তাদের ভোট তার প্রয়োজন নেই বলেও সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
রমনি বলেন, “যারা সরকারের সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল এবং যারা চিন্তা করে সরকারের দায়িত্ব চাকরি বণ্টন করা, আমি তাদের ভোট নিজের পক্ষে নিতে আগ্রহী নই।”
সাক্ষাতকারে নিজের হতাশা প্রকাশ করে রমনি বলেন, “এসব ভোটারের কারণেই নভেম্বরের নির্বাচনে প্রায় অর্ধেক ভোট পেতে সক্ষম হবেন ওবামা।”
তিনি বলেন, “সরকারি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল এসব লোক নভেম্বরের নির্বাচনে আমাকে ভোট দেবে না।”
সাক্ষাতকারে বর্তমান সরকারের গৃহীত বণ্টন নীতির সমালোচনা করে একে বিদেশ থেকে আমদানি করা ধ্যান ধারণা বলে উল্লেখ করেন।
পাশাপাশি মাসাচুসেটসের এই সাবেক গভর্নর ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণে যেতে পারে।”
এদিকে বিতর্কিত এবং বালখিল্যসুলভ মন্তব্যের কারণে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী মিট রমনিকে তিরস্কার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট হতে ইচ্ছুক ব্যক্তির সব আমেরিকানের জন্যই কাজ করা প্রয়োজন।”
মঙ্গলবার রাতে সিবিএস নিউজের জনপ্রিয় লেট নাইট চ্যাট শোর উপস্থাপক ডেভিড লেটারম্যানকে তিনি বলেন, “৪৭ শতাংশ আমেরিকান ভোটারকে পরিস্থিতির শিকার উল্লেখ করে রমনি মারাত্মক ভুল করেছেন।”
লেটারম্যান শোতে ২০০৮ সালের নির্বাচনী রাতের কথা উল্লেখ করে ওবামা বলেন, “২০০৮ সালের নির্বাচনের রাতে আমি বলেছিলাম, আমি প্রত্যেকের জন্যই কাজ করবো, এমনকি আমাকে যারা ভোট দেবেন না তাদের পক্ষেও।”
তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব আমাকে শিখিয়েছে, আপনাকে পুরো দেশকেই উপস্থাপন করতে হবে।”
একই সঙ্গে ‘ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের ধ্বংসের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ’ রমনির এ মন্তব্যেরও কড়া সমালোচনা করেন ওবামা।
রমনির এ মন্তব্যকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলেও তার ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
রমনির মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে ফিলিস্তিনের শীর্ষ শান্তি আলোচক সায়েব এরাকাত বলেন, “ফিলিস্তিনিরা শান্তি চায় না, রমনির এ অভিযোগ সত্য নয়”। রমনির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “তারাই ফিলিস্তিনিদের শান্তিবিরোধী বলে উল্লেখ করতে পারেন, যারা ইসরায়েলি দখলদারির সমর্থক।”
এদিকে রমনির বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে বিপুল সমালোচনা সৃষ্টি হওয়ায় হারানো অবস্থান ফিরে পাবার জন্য তার প্রচারণা শিবির এখন নতুন করে রণকৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত।
রমনির শিবির এখন প্রচারণার নতুন কৌশল প্রণয়নে কাজ করছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। সামনের দিনগুলোতে রমনি বাজেট পরিকল্পনা ও করনীতি নিয়ে আরও সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখবেন বলে তার শিবিরের প্রচারণা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
এ দিকে রমনির সাম্প্রতিক মন্তব্য এবং মার্কিন রাজনীতিতে এর প্রভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিবিসি উত্তর আমেরিকার সম্পাদক মার্ক মারডেল বলেন, “জনমত জরিপ অনুযায়ী যখন প্রতি ইঞ্চিতে প্রয়োজন আগ্রাসী লড়াই, ঠিক তখনই নিজের সামনে রাখা মাইক্রোফোনটি হারিয়ে ফেললেন রমনি।”