সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করবে আইএমএফ

সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করবে আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছেন। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে দলটি ঢাকা সফর করবেন বলে আইএমএফ ঢাকা অফিস সূত্র বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে। এর আগে গত এপ্রিল মাসে সংস্থাটির প্রতিনিধিরা ঢাকা ঘুরে যান। এই সফরকালে আগের দেওয়া পরামর্শ ও সুপারিশ বাস্তবায়নে অগ্রগতি নিয়ে তারা জানতে চাইবে।

দায়িত্বশীল সূত্র ‍জানিয়েছে, সফরকালে নতুন ভ্যাট আইনের কার্যকারিতা, সর্বশেষ বাজেট পরিস্থিতি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া পাওনা, ভর্তুকি কমানো, অনুমোদিত ঋণের ব্যবহার, মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন ও ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বিষয় নিয়ে কথা হবে। ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় ঘটনা সোনালী ব্যাংকের ঋণ কেলেংকারি ঘটনাটিও এবার আইএমএফ আলোচনায় আনতে পারে বলে জানা গেছে।

এদিকে, বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আইএমএফের সম্ভাব্য সফর নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্য-উপাত্ত চেয়ে ২৯ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠায়। ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব তথ্য-উপাত্ত পাঠাতে অনুরোধ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বৈঠকের একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে আইএমএফের সঙ্গে কী আলোচনা হবে, তারা কী জানতে চেয়েছেন ও বাংলাদেশের পক্ষে তাদের কী অবহিত করা হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আইএমএফে ঢাকা অফিস সূত্র বলছে, তাদের প্রতিনিধি দল আগামী ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসার প্রাথমিক সূচি রয়েছে। প্রতিনিধি দল প্রায় ১০ দিন ঢাকায় থাকবেন বলে জানা গেছে। তারা ব্যাংকিং খাতের বিষয়টি গুরুত্ব দেবেন।

আইএমএফ ঢাকা অফিস সূত্র বলছে, আইএমএফের প্রতিনিধি দল আর্থিক খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবেন। এর পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক, পরিকল্পনা বিভাগের সঙ্গে তাদের বৈঠক হবে।

এর পাশাপাশি ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনের বিষয়টি হালনাগাদ সম্পর্কে জানতে চাইবে। জানা গেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের ব্যাপারে সরকার যে কমিটি গঠন করেছিল সেই কমিটি ইতিমধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে। তবে এখনও আইনটি সংশোধনের চূড়ান্ত রূপ পায়নি। চূড়ান্ত সংশোধনের শিগগিরই মন্ত্রিসভায় পাঠানো হতে পারে।

গত এপ্রিলে সফরকালে আইএমএফ ভর্তুকি কমানোর ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিল। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মূল্য বাড়িয়ে সমন্বয় করার কথা বলেছিল। এর সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চাইলে দাতা সংস্থাটি।

সূত্র বলছে, আইএমএফ ঘোষিত প্রায় ১০০ কোটি ডলারের (৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার) সুদবিহীন ঋণের প্রথম কিস্তি এপ্রিল মাসের ২৫ তারিখে সরকারের অ্যাকাউন্টে জমা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের হিসাবে প্রথম কিস্তির ১৪ কোটি ১০ লাখ ডলার যোগ পায়। সেই অর্থ সরকার চাহিদামতো পরে উত্তোলন করে কোন কোন খাতে ব্যবহার করছে তা জানতে চাওয়া হবে। এছাড়া দ্বিতীয় কিস্তির অর্থের ছাড়ের বিষয়টি নিয়ে তারা কথা বলবেন।

বিশ্বব্যাংকের পদ্মাসেতুর ঋণ চুক্তির বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা হতে পারে বলে একটি সূত্র বলছে।

তথ্য মতে, চলতি বছরের ১২ এপ্রিল মাসে আইএমএফের বোর্ড সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ ঋণের অনুমোদন হয়।

প্রসঙ্গত, আইএমএফ থেকে ১০ বছরের জন্য এ ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। সাড়ে পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ড। আর পরের সাড়ে চার বছর তা পরিশোধ করতে হবে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক চাপ কাটাতে আইএমএফের বর্ধিত ঋণ প্রকল্পের আওতায় সংস্থাটি এ ঋণের অনুমোদন দেয়।

সূত্র জানায়, অনুমোদিত এ ঋণের অর্থ অবকাঠামো উন্নয়ন, অর্থনৈতিক চাপ মোকাবেলা করে স্থিতিশীলতা আনয়ন, বাজেট বাস্তবায়ন, মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ অর্থ ব্যবহার করার কথা।

অর্থ বাণিজ্য