1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ

সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে দশম সাক্ষীর ফের জেরা বুধবার

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২
  • ৫৯ Time View

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের দশম সাক্ষী কাজী নূরুল আফসারকে আসামিপক্ষের জেরা বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে-১ মঙ্গলবার তাকে চতুর্থ দিনের মতো জেরা করেন সাকা চৌধুরীর আইনজীবী আহসানুল হক হেনা।

এ জন্য কাশিমপুর কারাগার থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

এর আগে গত ২৮ আগস্ট সাকার বিরুদ্ধে ১০ম সাক্ষী হিসেবে চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক ছাত্রনেতা কাজী নূরুল আফসার ও ১১তম সাক্ষী হিসেবে চট্টগ্রাম শহরের মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রুপ কমান্ডার সৈয়দ মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন। ওই দিন এবং গত রোববার সাক্ষী কাজী নূরুল আফসারকে জেরা করেন সাকা চৌধুরীর আইনজীবী আহসানুল হক হেনা।

বুধবারও সাক্ষীকে ফের জেরা করবেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

উল্লেখ্য, নূরুল আফসার তার সাক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিকামী বাঙালির ওপর সাকা চৌধুরীর মধ্যযুগীয়, অমানুষিক ও বর্বর নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা দেন।

সাকার উপস্থিতিতেই নির্যাতনের ভয়াবহতার কারণে সাকা চৌধুরীকে হত্যার সিদ্ধান্ত এবং হত্যা মিশনে অংশ নেওয়া ও ভুলক্রমে গ্রেনেড হামলায় সাকা চৌধুরীর পরিবর্তে তার ড্রাইভারকে হত্যার ঘটনাও তুলে ধরেন এ সাক্ষী।

সাক্ষ্য শেষে আসামির ডকে উপস্থিত সাকা চৌধুরীকে সনাক্তও করেছিলেন নূরুল আফসার।

বর্তমানে ৬০ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক নূরুল আফসার ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের রাঙ্গুনিয়া থানা ও কলেজ শাখার তৎকালীন সভাপতি। তিনি গ্রুপ কমান্ডার সৈয়দ মোহাম্মদ মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়া-দাওয়া ও ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বেও ছিলেন। সাকার হাতে নির্যাতিত ও পরে নিখোঁজ মাহবুব আলম ছিলেন ছাত্রনেতা, যিনি নূরুল আফসারের পরে ছাত্র ইউনিয়নের কলেজ শাখার সভাপতি হয়েছিলেন।

সাক্ষী নূরুল আফসার তার সাক্ষ্যে জানান, ‘‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আমি প্রথমে ভারতে যাওয়ার বন্দোবস্ত করি। পরে সিদ্ধান্ত নেই, চট্টগ্রামেই থাকবো এবং পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করবো। এ সময় আমার সৈয়দ মাহবুব আলমের সঙ্গে যোগাযোগ হয় এবং আমি তার দলে রিক্রুট হই। আমি মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়া ও থাকার এবং ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করি।’’

ছাত্রনেতা মাহবুবের ঘটনা সম্পর্কে নূরুল আফসার সাক্ষ্যে বলেন, ‘‘মাহবুব ওই সময় বাড়িতে না থেকে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান শাহেব মিঞা অ্যান্ড সন্সে থাকতেন। তখন পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ ছিল যে, তার সঙ্গে ঘন ঘন যোগাযোগ করা সম্ভব হতো না।”

‘‘জুন-জুলাইয়ে খাতুনগঞ্জের মাহবুবের কোনো খোঁজ-খবর পাওয়া যায়নি। আমাদের চন্দনপুরায় বন্ধু-বান্ধবদেরও একটা আড্ডা ছিল। সেখানেও আলাপ আলোচনা হয়, মাহবুবকে পাওয়া যাচ্ছে না। ওই আড্ডায় আসতেন ডা. সমিউদ্দিনের পুত্র আমার বন্ধু আজিজ উদ্দিন। আজিজ উদ্দিনের কাছে জানতে পারি যে, মাহবুবের মতো একজনকে আহত অবস্থায় তাদের বাড়িতে আনা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমি মাহবুবের যে ধরনের দৈহিক বর্ণনা দিয়েছি, সে ধরনের একটা ছেলে আমার বন্ধু আজিজ উদ্দিনের বাসায় আহত অবস্থায় আছেন বলে জানান আজিজ। আজিজের কাছে জানতে পারি, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী গুডস্ হিলের বাড়িতে স্বাধীনতাকামী মানুষদের ধরে এনে অত্যাচার করেন। তাদের মধ্যে যারা বেশি অত্যাচারিত হতেন তাদের অবস্থা জানার জন্য গভীর রাতে গোপনে ডা. সমিউদ্দিনের বাসায় নিয়ে যাওয়া হতো। কে বাঁচবেন আর কে বাঁচবেন না তা পরীক্ষা করে সাকা চৌধুরীদের জানাতেন ডা. সমিউদ্দিন।”

‘‘ওই সময় ডা. সমিউদ্দিন তাদের দেখার পরে যাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকতো, হয় তাদের জেলে অথবা তাদের পছন্দের লোকদের কাছে হস্তান্তর করতেন সাকা। আর যাদের বাঁচার সম্ভাবনা ছিলো না, তাদের মেরে ফেলা হতো অথবা তারা নিখোঁজ হয়ে যেতেন।’’

সাক্ষী জানান, ‘‘মাহবুবের গ্রামের বাড়ির ইউসুফ খান নামে একটি ছেলে তার সমবয়সী ছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। যুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে ফিরে আসার পরে তাকে গুডস হিলে ধরে আনা হয়। তবে ইউসুফকে তার বাবা সাকার কাছে নিয়ে আত্মসমর্পণ করান। পরে ইউসুফ খান সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সকল কাজের সহযোগী হয়ে যান।”

সাক্ষী বলেন, ‘‘আজিজের মাধ্যমেই জানতে পারি, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ ওই ইউসুফ খান, মাকসুদ, হামিদুল হক চৌধুরী খোকা ও জিয়াউদ্দিন খাতুনগঞ্জ থেকে মাহবুব আলমকে গুডস্ হিলে উঠিয়ে নিয়ে যান এবং সেখানে তাকে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন করা হয়।’’

সাক্ষী বলেন, “আমরা আজিজ উদ্দিনের কাছে আরো জানতে পারি, নির্যাতনের ফলে মাহবুবের গায়ে কোনো চামড়া ছিল না। পেরেক মারা টেবিলের ওপরে তক্তা চাপা দিয়ে তাকে নির্যাতন করা হতো। ফলে তার বাঁচার কোনো সম্ভাবনা ছিল না। এবং আজ পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ-খবর পাওয়া যায়নি।”

নুরুল আফসার বলেন, “এর পরিপ্রেক্ষিতে ঠিক করা হয় যে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তার নির্যাতনের মাত্রা এতো বেড়ে গেছে যে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তাকে খতম করতে হবে। তবে তিনি যথেষ্ট নিরাপত্তার মধ্যে থাকতেন। ফলে তার বিরুদ্ধে কোনো কিছু করা সহজ বিষয় ছিল না।”

তিনি জানান, ‘‘আমি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠনের কাছে সারা দিনই ব্যস্ত থাকতাম। আমার এতো ব্যস্ততার কারণ জানতে চান বন্ধু আজিজ উদ্দিন। আমি তাকে ভয় দেখানোর জন্য একটি হিটলিস্ট তাকে দেখাই। এবং বলি, তোমার বাসার সবার নামও এ হিটলিস্টে রয়েছে। তিনি তখন ভয় পেয়ে তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার ব্যাপারে কি করা যায় তা জানতে চান।’’

‘‘আমি তখন আজিজকে বলি, তোমাদের বাড়িতে সাকা চৌধুরী পাকিস্তানিদের নিয়ে দাওয়াত খেতে আসেন। এরপর যেদিন তিনি আসবেন, আমাদের আগেভাগে খবর দিয়ে দিলে বুঝতে পারবো যে, তোমরা আমাদের সহযোগী। তখন তোমাদের কিছু করবো না।’’

‘‘সেই কথা অনুযায়ী আজিজরা সাকাকে দাওয়াত দেন। সাকা তাদের বাড়িতে ২৪ সেপ্টেম্বর আসবেন বলে ঠিক হয়। আজিজ সে খবর আমাকে জানিয়ে দেন।’’

সাক্ষী বলেন, “পরে আমি আমার গ্রুপ কমান্ডার এসএম মাহবুবের সঙ্গে কথা বললাম। তখন মাহবুব দলের দুই জনের সঙ্গে আলাপ করে আমাকে রেকি করার দায়িত্ব দেন। রেকি শেষে আমরা একত্রে চারজন মিটিং করি। মিটিংয়ে আমরা আমাদের প্রোগ্রামের দায়িত্ব বন্টন করি। আমি রাস্তা চেক দেওয়ার দায়িত্ব নেই। ওই দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী আমি ছাড়া বাকি তিনজন তাদের অস্ত্র নিয়ে যার যার অবস্থান গ্রহণ করেন।”

নুরুল আফসার বলেন, “সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীসহ ডা. সমিউদ্দিনের বাড়িতে ২৪ সেপ্টেম্বর সণ্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে দাওয়াতে যান। ওই সময় আমি রাস্তার ওপরে দাঁড়ানো ছিলাম। আমার সঙ্গী তিনজন সমিউদ্দিনের বাড়ির বড় একটি ড্রেনের স্লাবের ওপর অবস্থান নিয়ে ছিলেন। আমরা সংবাদ পেলাম, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজে গাড়ি চালিয়ে আসছে। কিন্তু ওই দিন তিনি নিজে গাড়ি না চালিয়ে তার ড্রাইভার চালাচ্ছিলেন। আমাদের লক্ষ্য ছিল ড্রাইভিং সিটে। অন্ধকার থাকায় আমরা বুঝতে পারিনি, সাকা গাড়ি চালাচ্ছিলেন না। কিন্তু আমরা নিশ্চিত ছিলাম, তিনি ড্রাইভিং সিটে আছেন। তাই ড্রাইভিং সিট লক্ষ্য করে গুলি ও গ্রেনেড চালালে ড্রাইভারের গায়ে গুলি লাগে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পায়ে গ্রেনেডের স্প্রিন্টার লেগে আহত হন। পরের দিন লোক মুখে ও পত্রিকা পড়ে জানতে পারি, ড্রাইভার মারা গেছেন। সাকা আহত হয়েছেন। পরে তিনি বিদেশে চলে যান।”

উল্লেখ্য, সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত ১৪ মে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর পর এ পর্যন্ত নূরুল আবছার ও সৈয়দ মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ছাড়াও বাংলা একাডেমীর সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সলিমুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম সিরু বাঙালি, শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহের ভাতিজা গৌরাঙ্গ সিংহ ও পুত্র প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ, শহীদ পরিবারের সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মা, আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ (আব্বাস চেয়ারম্যান), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) উপাচার্য মোঃ সালেহ উদ্দিন এবং ব্যবসায়ী পরাগ ধর সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের জেরাও সম্পন্ন করেছেন আসামিপক্ষ।

২০১০ সালের ২৬ জুন হরতালের আগের রাতে রাজধানীর মগবাজার এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর ও গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায়ই সে বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রত্যুষে গ্রেফতার করা হয় তাকে। ১৯ ডিসেম্বর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে। পরে ৩০ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে প্রথমবারের মতো সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে অগ্রগতি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত দল। একই বছরের ১৪ নভেম্বর সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। ১৮ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

৫৫ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে এক হাজার ২৭৫ পৃষ্ঠার আনুষঙ্গিক নথিপত্র এবং ১৮টি সিডি ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় প্রসিকিউশন।

৪ এপ্রিল সাকার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এতে তার বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৩টি মানবতাবিরোধী অপরাধের উল্লেখ করা হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ করে গুডস হিলে নির্যাতন, দেশান্তরে বাধ্য করা, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধ। ৩ মে ও ৭ মে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাকা চৌধুরীর বিচার।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ