বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে অর্থ পাচারের (মানি লন্ডারিং) কিছু ব্যাংকিং ডকুমেন্ট পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব ডকুমেন্টের সূত্র ধরে অর্থ পাচারের অনুসন্ধান এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুদকেরই একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র।
এছাড়া লন্ডনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ফ্ল্যাট কিনেছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে তারও তদন্ত করছে দুদক।
অভিযোগ রয়েছে, লন্ডনের ১৫ হান্টিং টেক্সলি, ডি/এ-এফ,২/এফবিতে একটি ফ্ল্যাট কেনেন এই বিএনপিনেতা। তার স্ত্রী হাসনা জসিম উদ্দীন মওদুদের (হাসনা মওদুদ) অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে ফ্ল্যাটটি কেনা হয় বলে দুদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধান-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ৫ মার্চ ফ্ল্যাটটি কেনা হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য প্রায় চার কোটি টাকা।
তবে দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লন্ডনে ফ্ল্যাটের বিষয়ে দুদক এখনও (৩১ আগস্ট পর্যন্ত) পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি। সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবরের মাঝামাঝি সয়য়ের মধ্যেই দুদক নিশ্চিত হতে পারবে হান্টিংটনের টেক্সলিতে বাড়িটি তার কি-না! সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে এ বিষয়ে দুদক প্রয়োজনে যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে আইনি প্রক্রিয়ায় সহায়তা চাইতে পারে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অর্থ পাচারের বিষয়ে তথ্য চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে লন্ডনের অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরে চিঠি লেখে দুদক।
এছাড়া সদ্য গত আগস্টে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের মাধ্যমে এমএলআর`র আওতায় কিছু তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানায় দুদকের অপর এক সূত্র।
এদিকে মওদুদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অনুসন্ধানেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও তার স্ত্রী হাসনা মওদুদের পাঁচ বছরের আয়কর নথি চাওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে এনবিআর ও দুদক উভয় সূত্রই।
সূত্রমতে, এনবিআর থেকে করের নথি পাওয়ার পর দুদক খতিয়ে দেখবে মওদুদ ও তার স্ত্রী কর ফাঁকি দিয়েছেন কি-না!
তাদের মধ্যে মওদুদ কর অঞ্চল-৮-এর ৮৭ নম্বর সার্কেলের এবং তার স্ত্রী হাসনা মওদুদ একই কর অঞ্চলের ৮৮ নম্বর সার্কেলের করদাতা বলেও জানায় ওই সূত্র।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মওদুদ আহমদের অর্থ পাচার বিষয়ে অনুসন্ধানকারী দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ বলেন, “এনবিআরের কাছে সম্প্রতি ব্যারিস্টার মওদুদ ও তার স্ত্রীর আয়কর নথি চাওয়া হয়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখছে দুদক।”
এদিকে এনবিআরের আয়কর অনুবিভাগের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মওদুদ ও তার স্ত্রীর ৫ বছরের আয়করের হিসাব চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক।তাদের আয়কর রিটার্নের ফটোকপিও চেয়েছে।
সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে মওদুদ ও তার স্ত্রীর পাঁচ বছরের আয়করের ফটোকপি দুদককে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
দুদক জানায়, এনবিআরের আয়করের নথি হাতে পাওয়ার পর তাতে কোনো অসামাঞ্জস্য বা গরমিল থাকলে মওদুদ ও তার স্ত্রীকে নোটিশের মাধ্যমে তলব করতে পারে দুদক। এক্ষেত্রে মওদুদ ও তার স্ত্রী আয়করের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করেছেন কি-না তা খতিয়ে দেখাই উদ্দেশ্য দুদকের।
উল্লেখ্য, লন্ডনে মওদুদ আহমদের নামে বাড়ি কেনার বিষয়ে তদন্তের অংশ হিসেবে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এর অংশ হিসেবে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪ জুলাই নোটিশ দেয়। তাতে ১১ জুলাই সকালে তাকে দুদকে হাজির হতে বলা হয়। কিন্তু তিনি ৮ জুলাই হাইকোর্টে হাজির হয়ে দুদকের নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে রিট পিটিশন দায়ের করলে আদালত তিন মাসের জন্য দুদকের নোটিশের কার্যকরিতা স্থগিত করেন।
তবে হাইকোর্ট নোটিস স্থগিত করলেও তদন্তের ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি না করায় দুদক অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এর আগে অভিযোগ উঠলে মওদুদ আহমদ সংবাদ সম্মেলন ডেকে দাবি করেন, লন্ডনে তার কোনো বাড়ি নেই। দুদক বাড়ি আছে প্রমাণ করতে না পারলে মামলা করবেন বলেও হুমকিও দেন তিনি।
মওদুদের ওই বক্তব্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এখন কোমর বেঁধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।