1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৭ অপরাহ্ন

ডা. নিতাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ পরিবারের

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ২৪ আগস্ট, ২০১২
  • ৪৭ Time View

রাজধানীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক এবং বিএমএ ও স্বাচিপ নেতা ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাইকে (৪৭) পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। পরিবারের দাবি, হাসপাতালে সর্বশেষ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে হাসপাতালের কিছু চিকিৎসকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ছিল। এ ক্ষোভ থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে তাদের ধারণা।

পরিবারের এ দাবিকে একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশও। পুলিশ বলছে, তারা রাজনৈতিক ও চুরি করতে এসে খুন হতে পারে এই দুটি মোটিভকে প্রাধাণ্য দিয়ে তদন্ত করছেন। এ খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত যে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে, তাদেরকে এসব বিষয় নিয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আটককৃতদের মধ্যে ইউসুফ নামের হাসপাতালের একজন কোয়ার্টার মাস্টার রয়েছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

নিহত ডা. নিতাইয়ের মা মঞ্জু দত্ত জানান, হাসপাতালের ডুপ্লেক্স কোয়ার্টারের নিচতলায় তিনি ছিলেন। ঈদের ছুটির কারণে তার ছেলের স্ত্রী লাকি দত্ত চট্রগ্রামে ছিলেন। এ বাসার দোতলায় নিতাইসহ তার স্ত্রী লাকি দত্ত থাকতেন। বুধবার দিবাগত গভীর রাতে তিনি গোঙ্গানির শব্দ পান। এ সময় তিনি দ্রুত বাসার দ্বিতীয় তলায় উঠে ‘নিতাই, নিতাই’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। অনেকক্ষণ চিৎকারের পর নিতাই দরজার লক খুললে তিনি তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। ছেলেকে রক্তাক্ত দেখে তিনি চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় কোয়ার্টারের গার্ড আব্দুর রউফ বাসায় এলে আরও লোকজনসহ তাকে হাসপাতালের জরুরি ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মঞ্জু দত্ত আরও বলেন, ডা. নিতাইকে দুর্বৃত্তরা হাত ও মুখ বেঁধে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। তার ঘাড় ও পেটে বড় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া ছোট ছোট করে শরীর বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

তিনি দাবি করেন, দুর্বৃত্তরা বাসা থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা ও ৪০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেছে।

আব্দুর রউফ সাংবাদিকদের জানান, তিনি চিৎকার শুনে বাসায় আসেন। এ সময় তিনি ডাক্তার নিতাইয়ের মুখ ও হাত বাঁধা দেখতে পান। এ অবস্থায় লোকজনকে ডাকাডাকি করে জড়ো করেন তিনি।

সরেজমিনে ওই বাসা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, হাসপাতালের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ডা. নিতাইয়ের কোয়ার্টার। ডব্লিউ-২ এই কোয়ার্টারের দক্ষিণ পাশে ডা. নিতাই ও উত্তর পাশে ডা. আনোয়ার থাকতেন। ডুপ্লেক্স এই কোয়ার্টারের মতোই আরও কয়েকটি কোয়ার্টার রয়েছে। ওই বাসার পেছনে একটি বড় দেয়াল। তার ঠিক পেছনে ঢাকা মেডিকেলের একটি কোয়ার্টার। যা এখনও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

পুলিশসহ পরিবারের সদস্যদের ধারণা, দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে দ্বিতীয় তলার পশ্চিম কোণের জানালার গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা। এরপর তারা ডা. নিতাইয়ের রুমে প্রবেশ করে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে।

বৃহস্পতিবার বেলা প্রায় ১১টার দিকে দেখা গেছে, তখনো তার শরীরের রক্তে পুরো রুমটি ভিজে রয়েছে। মশারিসহ রুমের চারপাশেই রক্তের দাগ রয়েছে।

এদিকে নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়ার পর দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে চট্রগ্রাম থেকে আসেন নিহত ডা. নিতাইয়ের বাবা তড়িৎ দত্ত, স্ত্রী লাকি দত্তসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। এ সময় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে বাড়ির পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

লাকি দত্ত সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, সম্প্রতি হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে ঝামেলা হয়। এতে করে তার স্বামী বেশ কয়েকবার তার কাছে মৃত্যুর আশঙ্কা করেছিলেন।

লাকি আরও বলেন, গত ২৭ জুলাই তিনি তার এক সহকর্মী ডা. রাইহানের নাম উল্লেখ করে বলেছিলেন, হয় রাইহানকে অথবা তাকে হত্যা করা হবে। সে সময় তিনি তার স্বামীকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ারও পরামর্শও দিয়েছিলেন তিনি।
তবে লাকি এটাও বলেছেন, তাকে যে হত্যা করা হলো, এটি চুরি করতে এসে নাকি নিয়োগের ঝামেলাকে কেন্দ্র করে তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। তিনি তার স্বামীর হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে শাস্তি দাবি করেছেন।

ডা. নিতাইয়ের শ্যালক সুরাজ চৌধুরীও সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তার জামাইবাবুর প্রতিপক্ষ গ্রুপের লোকজনই ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করতে পারেন।

নিয়োগের ঝামেলাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড কিনা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে হাসপাতালের তত্ত্বাবাধায়ক ডা. বশীর আহম্মেদ বলেন, নিয়োগ নিয়ে কোনো ঝামেলা ছিল না। গত ১ আগস্ট ওই নিয়োগ সম্পন্ন হয়। তৃতীয় ও চুতর্থ শ্রেণীর ৫৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ডা. নিতাইয়ের ভাই গৌতম দত্ত ও ভাইয়ের স্ত্রী কনা দত্তও রয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘‘ব্যক্তিগতভাবে ডা. নিতাইয়ের কোনো শত্রু ছিল কিনা, তা জানতাম না।’’

ঘটনা সম্পর্কে ডিএমপি’র গুলশান জোনের এসি শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, পরিবারের অভিযোগসহ খুনের ঘটনার মোটিভ দেখে তারা তাদের তদন্ত কাজ চালাচ্ছেন। এ পর্যন্ত খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৪ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে ডিবির হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি অবশ্য আটককৃতদের নাম বলতে অস্বীকার করেছেন।

নিহত ডাক্তারের বাসা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি বড় ছোরা, একটি চাপাতি, গ্রিল কাটার যন্ত্র ও পেরেক ওঠানো কোরাবারী জব্দ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তবে পুলিশের একটি সূত্র থেকে আটককৃতদের দুই জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন সাইদুর ও ইউসুফ।

এদিকে ডা. নিতাই চন্দ্রের হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের ডাক্তারসহ অন্যান্য কর্মচারীরা তার বাসায় যান। সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। সেখানে বিএমএ, স্বাচিপ, পেশাজীবী চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ. ফ. ম রুহুল হক ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীও তার বাসায় আসেন।

বেলা সাড়ে ৩টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ডা. নিতাইয়ের মরদেহ নিয়ে চট্টগ্রামের বাঁশখালির কালিপুরে তার নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। চট্টগ্রামের কোতায়ালি থানার বলুয়ার দিঘির পাড়ে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই হত্যার ঘটনায় তার পিতা তড়িৎ দত্ত বাদী হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন এসআই জুলফিকার আলী।

ডা. নিতাই ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের জিএস ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগেরও সভাপতি ছিলেন।

১৯৯৭ সালে তিনি বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর একবার বদলি হলেও ২০০৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি বক্ষব্যাধি হাসপাতালেই কর্মরত ছিলেন। তিনি আওয়ামীপন্থী ডাক্তারদের সংগঠন স্বাচিপ ও বিএমএ’র নির্বাচিত কার্যকরী পরিষদের সদস্য ছিলেন।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ