1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৩২ অপরাহ্ন

অলিম্পিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনা

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৯ জুলাই, ২০১২
  • ২১৩ Time View

বিশ্বক্রীড়ার মিলন মেলার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো লন্ডনে। সাড়া বিশ্বকে চোখ ধাঁধাঁনো অনুষ্ঠানের চমক দেখালো লন্ডন। বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত ২টায় (লন্ডন সময় রাত ৯টা) শুরু হয়ে একটানা ভোর সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত চলে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর বর্ণাঢ্য প্যারেড শেষে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধন।

এর আগে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ২০৪টি জাতির এথলেটদের প্যারেড শেষ হয় চোখ ধাঁধাঁনো নানা রঙ্গের আলোর খেলার মধ্য দিয়ে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেথ, প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামরনসহ বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে মাঠে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।

দেশের পতাকা হাতে আর্চার ইমদাদুল হক মিলনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল পতাকা হাতে মাঠে যখন প্যারেড করছিল তখন ভিআইপি আসনে বসা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও তার ছেলে জয়কে দেখা গেছে হাস্যজ্জ্বল, উল্লসিত।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. সাইদুর রহমান খানও তখন উপস্থিত ছিলেন।

বিভিন্ন কারণে এবারের লন্ডন অলিম্পিকের সঙ্গে বাঙালির সৃষ্টি হয়েছে এক ইতিহাস সৃষ্টিকারী সম্পৃক্ততা। অলিম্পিকের বিভিন্ন পর্বে কয়েকজন বাঙালির অংশগ্রহণ,  বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট লি-রাজ অলিম্পিকের অফিসিয়াল ক্যাটারার নির্বাচিত হওয়া এবং ব্রিটেনে বাঙালির প্রাণকেন্দ্র ব্রিকলেন অলিম্পিকের অফিসিয়াল কারি ক্যাপিটাল মনোনীত হওয়ায় লন্ডন অলিম্পিক বিশ্ব বাঙালির জন্য এক ঐতিহাসিক ইভেন্ট হিসেবে উপস্থিত হয়েছে।

আর তাইতো অলিম্পিকের সেই ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্যে সারা বিশ্বের ক্রীড়ামোদী মানুষের থেকে একটু বেশিই উম্মুখ হয়ে অপেক্ষায় ছিলেন ব্রিটেন প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সারা বিশ্বের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালিরা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সশরীরে উপস্থিতি ২০১২’র লন্ডন অলিম্পিকের সঙ্গে বাঙালির ইতিহাস সৃষ্টিকারী সম্পৃক্ততাকে যেন আরও ঔজ্জ্বল্য এনে দিয়েছে। রাজনীতির বাইরে তখন হাসিনার একটিই পরিচয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

বিরোধী দল বিএনপি যখন শেখ হাসিনার অলিম্পিক সফরের বিরোধিতা করে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে ঝাড়ু মিছিল করছিল, তখন শ্বেতাঙ্গ বেশ ক’জন মানুষ খুবই উল্লসিত হয়ে এই প্রতিনিধির কাছে জানতে চাইলো এটি কি বাংলাদেশিদের স্বাগত জানানোর রেওয়াজ? জিজ্ঞেস করলো অলিম্পিক নগরীতে তোমাদের প্রধানমন্ত্রীকে কি তোমাদের রেওয়াজ অনুযায়ী স্বাগত জানাচ্ছো?

লন্ডন সময় বিকেলে বাকিংহাম প্রাসাদে ব্রিটেনের রাণীর দেওয়া অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অলিম্পিক ভিলেজের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। অলিম্পিক ভিলেজে যাওয়ার সম্ভাব্য পথের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি আয়োজন করে বিক্ষোভের।
কিন্তু অলিম্পিক জ্বরে আক্রান্ত ব্রিটিশদের অনেকেই এ বিক্ষোভকেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর বাংলাদেশি রেওয়াজ হিসেবেই ধরে নিতে চায়।

অলিম্পিক মাঠে যখন বাঙালি বংশোদ্ভূত করিওগ্রাফার আকরাম খানের নেতৃত্বে এমিলি স্যান্ডের গানে ৫০ জন নৃত্য শিল্পীকে নিয়ে প্রদর্শিত হচ্ছিল জন্ম-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের দৃশ্য, তখন ভিআইপি আসনে বসা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যেমন গর্বিত হয়েছেন, তেমনি মাতৃভূমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিও নিশ্চয়ই আকরামের জন্যে এনে দিচ্ছিল বিরাট উৎসাহ।

অলিম্পিকে বাঙালির সম্পৃক্ততা ঘটিয়ে এই জনগোষ্ঠির মুখ উজ্জল করেছেন যারা তাদের মধ্যে করিওগ্রাফার আকরাম খান, যার কৃতিত্বের কথা বাংলানিউজ একটি রিপোর্টের মাধ্যমে আগেই জানিয়েছিল বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাঙালিদের। খ্যাতিমান এই তরুণ করিওগ্রাফার তার অনবদ্য শিল্পকর্মের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মর্যাদাপূর্ণ এওয়ার্ড পেয়েছিলেন।

চার বছর বয়স থেকে নৃত্যের প্রতি আকৃষ্ট আকরাম খান বিশ্ব নৃত্যাঙ্গনে একটি পরিচিত নাম। বাংলাদেশ নিয়ে তৈরি বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো একক নৃত্যনাট্য ‘দেশ’ এর জন্য তিনি পেয়েছিলেন অলিভিয়ার এওয়ার্ড।

ব্রিটেনসহ পাশ্চাত্যের মিডিয়াগুলোতে বার বার ঝড় তুলেছে বাঙালি এই যুবকের নৃত্য প্রতিভা। লন্ডন অলিম্পিকে তার প্রদর্শিত নৃত্য আবারও সারা বিশ্বের ক্রীড়ামোদী মানুষের মধ্যে আবারও ঝড় তুলল।

অলিম্পিকে শান্তির মশাল আট হাজার  মশালবাহীর হাত হয়ে যখন ছুটে চলছিল যুক্তরাজ্যের নানা প্রান্তে, তখনও এর বাইরে নেই বাঙালিরা। যুক্তরাজ্যের নানা প্রান্তের নয় জন ব্রিটিশ বাংলাদেশি এই পর্বে অংশ নিয়ে সৃষ্টি করেছেন তাদের ঐতিহাসিক সম্পৃক্ততা। এদেরই একজন রোকসানা। লন্ডনের গ্রিনউইচ এলাকায় অলিম্পিকের মশাল হাতে নিয়ে দৌড়েছেন বাঙালি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ কিকবক্সিং চ্যাম্পিয়ন রোকসানা।

অলিম্পিক স্মারকমুদ্রার নকশা তৈরি করে খ্যতি অর্জন করেছেন বাঙালি তরুণ সায়মান মিয়া। স্মারক মুদ্রার নকশার জন্যে ব্রিটেনের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্ট এন্ড ডিজাইনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে ব্যাপক আলোচিত হন বাঙালি এ তরুণ। কয়েক হাজার নকশার মধ্য থেকে নির্বাচিত হয় তার নকশা। সায়মানের নকশা করা ২০১২ অলিম্পিকের এ স্মারক মুদ্রাটি এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীজুড়ে।

নয় বছর বয়সের ক্ষুদে সৌগত প্রিয়ম অংশ নিয়েছে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। সৌগতের মতো আরও প্রায় ৯০ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোর, তরুণ-তরুণীদের কিছু কিছু অংশ নিয়েছেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, কেউ কেউ অংশ নেবেন সমাপনী পর্বে।

বাঙালি খাবার এখন ব্রিটেনের গন্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বেই সমাদৃত।  আর সে কারণেই বিশ্বের রসনাবিলাসীদের তৃপ্তি মেটাতে কারি ক্যাপিটালখ্যাত বাঙালি পাড়া ব্রিকলেনও এখন সরগরম।

ব্রিকলেনকে লন্ডন অলিম্পিকের অফিসিয়াল কারি ক্যাপিটাল হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর ব্রিকলেন যেন এখন আরও সরগরম। বছরে প্রায় চারশ’ কোটি পাউন্ডের বাঙালির কারি ব্যবসাও লন্ডন অলিম্পিকে রাখছে বিশেষ অবদান। সারা বিশ্বের ক্রীড়ামোদী মানুষ যারা অলিম্পিক উপভোগ করতে লন্ডন এসেছেন তাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত এখন বাঙালি পাড়া ব্রিকলেন।

সব মিলিয়ে ২০১২ এর লন্ডন অলিম্পিকের সঙ্গে বাঙালির সম্পৃক্ততা ইতিহাস সৃষ্টিকারী বলেই মনে করছেন ব্রিটেনের নেতৃস্থানীয় বাংলাদেশিরা।

অলিম্পিকে বাঙালি অংশগ্রহণকারীরা কোনো কৃতিত্ব দেখাতে পারলে বাঙালির এই সম্পৃক্ততা বিশ্ব বাঙালির ইতিহাসে এক উজ্জল অধ্যায় রচনা করবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ