1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন

অবশেষে আবুল হোসেনের পদত্যাগ

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই, ২০১২
  • ৫৯ Time View

অবশেষে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রী ও পদ্মাসেতু বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু সৈয়দ আবুল হোসেন।

সোমবার তিনি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের কাছে পদত্যাগের কথা স্বীকার করেছেন। এদিন মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকেও যোগ দেননি সৈয়দ আবুল হোসেন।

জানা গেছে, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন তার পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়েছেন।

তার বিরুদ্ধে পদ্মাসেতু প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছে বিশ্বব্যাংক। পদ্মাসেতুতে ১২০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা করার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে সরকার ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ ঋণসহায়তা বাতিল করে সংস্থাটি।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়। কিন্তু এখানেও শেষ পর্যন্ত তার ঠাঁই হলো না।

সোমবারই একটি দৈনিকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তার আশু পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেছিলেন, তিনি আর মন্ত্রিসভায় থাকতে চান না। এ নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে তার পদত্যাগের ঘটনা ঘটলো। গত দু’দিন ধরেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল, আবুল হোসেন মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন।

ওই দৈনিকের সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, “পদ্মাসেতু বিষয়ে তদন্ত চলছে। এ অবস্থায় আমি সরকারি দায়িত্ব পালন করতে চাই না। আমার শুভাকাঙ্ক্ষী এবং আমি যাদের শ্রদ্ধা করি তারা বিভিন্ন সময় আমাকে বলেছেন, তদন্ত চলাকালে আমার মন্ত্রীপদে থাকা উচিত না। আমি সিদ্ধান্তটা নিয়েছি, কার্যকর ব্যবস্থাও নিয়ে ফেলেছি। আমি দায়িত্বে থাকবো না।’’

মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া বৈঠকে সৈয়দ আবুল হোসেনের অনুপস্থিতির কথা স্বীকার করেন।

তবে সৈয়দ আবুল হোসেনের দাবি, “তদন্তে প্রমাণিত হবে, আমি নির্দোষ। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। দুদক, কানাডার পুলিশ ও বিশ্বব্যাংক– যে যতোই তদন্ত করুক না কেন, আমাদের দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারবে না। আমি অন্যায়কে প্রশ্রয় দিইনি। স্বচ্ছতা, আন্তরিকতা ও দ্রুততার সঙ্গে পদ্মাসেতুর জন্য কাজ করেছি।”

তদন্তের স্বার্থে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন কি না– এ প্রশ্ন করা হলে কোনো সরাসরি জবাব দেননি সৈয়দ আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি জাতির উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখেছিলাম। সেখানে ইঙ্গিত দেওয়া আছে। সেটি প্রধানমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংক ও জাতি- সবাই দেখেছে।’’

তাহলে দফতরবিহীন মন্ত্রী থাকছেন, নাকি মন্ত্রিসভা থেকে সরে যাচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল হোসেন বলেন, “আমি মন্ত্রী থাকবো কি না, সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছে। আর দফতরবিহীন মন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে আল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা দিয়েছেন। তিনিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।”

উল্লেখ্য, মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোনো মন্ত্রী কোনো কারণে উপস্থিত থাকতে না পারলে তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে আগে থেকেই জানিয়ে দেন। এ ক্ষেত্রেও সৈয়দ আবুল হোসেন আগে থেকে কিছু জানাননি বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া।

সম্প্রতি সৈয়দ আবুল হোসেন বিভিন্ন দৈনিকে বিজ্ঞাপন হিসেবে বিশাল খোলা চিঠি প্রকাশ করেন। খোলা চিঠিতেও তিনি তার সরে পড়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

গত ২৯ জুন পদ্মাসেতুর পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার ব্যর্থ হওয়ায় এই প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করে বিশ্বব্যাংক।  পদ্মানদীর ওপর ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক ও রেলসেতুতে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ যোগান দেওয়ার কথা ছিল।

অর্থায়ন না করার বিষয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার এ সেতু প্রকল্পের দুর্নীতিতে অভিযুক্ত উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিষয়ে তদন্ত করতে ব্যর্থ। বিশ্বব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। আর বিষয়টিতে সরকারের কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়।

এর আগে দেশের সর্ববৃহৎ নির্মাণ প্রকল্প পদ্মাসেতুর অর্থ যোগানদাতা বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত ১১ অক্টোবর তাদের অর্থায়ন স্থগিত করে।

বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ, সেতু নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগে প্রাক-যোগ্যতা যাচাই প্রক্রিয়ায় এবং পদ্মাসেতুর পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হতে পারে। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মাসেতুর অর্থায়ন নিয়ে দুদক তদন্ত কাজ শুরু করে। এ ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কাজ দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়। একটি হলো পদ্মাসেতুর কাজে ঠিকাদার নিয়োগ ও অপরটি পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দুর্নীতির ঘটনা অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুদকের উপ-পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীকে। এছাড়া সেতু প্রকল্পের জন্য পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া বিষয়ে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় সহকারী পরিচালক মির্জা জাহিদুল ইসলামকে।

দায়িত্ব পাওয়ার পর উপপরিচালক শিবলী বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পাশাপাশি সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন। মূলত তদন্তে যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালে সৈয়দ আবুল হোসেন কীভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সাঁকো ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে দুর্নীতির চেষ্টা করেছেন সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়। এরই মধ্যে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও জবানবন্দি নেওয়া হয়। সার্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ শেষে দুদকের সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রতিবেদনটি পেশ করা হয়।

অপরদিকে, পদ্মাসেতু প্রকল্পের জন্য পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়েছে কিনা সে অভিযোগ তদন্তে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এছাড়া সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও আরও বেশ কয়েকজনকে দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করে।

গত জুলাই বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর পদ্মাসেতু প্রকল্পের আরেক অর্থদাতা প্রতিষ্ঠান এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও (এডিবি) অর্থায়ন করবে না বলে সরকারকে জানিয়ে দেয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, “বিশ্বব্যাংক যে যুক্তিতে অর্থায়ন বাতিলের সিদ্ধান্তে গেছে, তার প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে এডিবির। সুশাসন বিষয়ে এডিবি ও বিশ্ব্যব্যাংক একই ধরনের নিয়মনীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে।”

পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণসহায়তা ছাড়াও এডিবির দেওয়ার কথা ছিল  ৬১ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা । তবে তৃতীয় অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এ সেতুর অর্থায়ন থেকে সরছে না বলে জানায়। পদ্মাসেতুতে ৪০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা দেওয়ার কথা জাপানি সংস্থাটির। জনগণের বহুল আকাঙ্ক্ষিত এ সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯০ কোটি ডলার।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ