1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:১০ অপরাহ্ন

আসছে ঈদ: জারদৌসি ও কারচুপির কাজ চলছে চট্টগ্রাম বিহারি কলোনিতে

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই, ২০১২
  • ৫৯১ Time View

কারিগরের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় রঙিন কাপড় আদল পাচ্ছে জমকালো থ্রিপিস, শাড়ি, ফতুয়া, পাঞ্জাবির। ক্যাটালগের ফ্রেমের মতো ঝলমলে হাসি একেকটি নকশার। সুঁই-সুতো-পাথর-চুমকির জারদৌসি ও কারচুপির কাজে উঠে আসছে আভিজাত্য, ঐতিহ্য আর বৈচিত্র্যের ছাপ।

পেশাদার কারিগরদের পাশাপাশি ঈদের আগে বাড়তি চাপ মোকাবিলার জন্য শিশু-কিশোররাও কাজ করছে সমানে। ধাতব পুঁতি, পাথর, চুমকি দিয়ে নকশা ভরাটের কাজে ব্যস্ত সবাই, ফুরসত নেই দম ফেলার। তারপরও সুঁই-সুতো, নকশার ধাতব-প্লাস্টিকের নানা উপকরণের দাম বৃদ্ধি, কম মজুরি, পুঁজি ও কারিগর সংকটের কারণে অনেকে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।

খুলশী থানার ঝাউতলা বিহারি কলোনির সোমবারের চিত্র এটি। সারা বছর এখানে কারচুপির কাজ চলে। রমজান ও ঈদে চাপ বেড়ে যায়। বিভিন্ন আলো ঝলমলে বিপিণিকেন্দ্রে আলো ছড়ানো পোশাকগুলোর উল্লেখযোগ্য একটি অংশ সরবরাহ হচ্ছে এখান থেকে।

দক্ষিণ খুলশীর পাহাড়িকা আবাসিক এলাকার পাপ্পু ফ্যাশন অ্যান্ড বুটিকের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ পাপ্পু বিহারি কলোনিতে জারদৌসি ও কারচুপির কাজ করছেন ৮ থেকে ১০ বছর ধরে। গড়ে তুলেছেন ছোটখাটো একটি কারখানা। সেখানে কাজ করেন ১০ থেকে ১২ জন কর্মী।

সব ধরনের পোশাকের কাজ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘এখন বোরকার বড় একটি অর্ডারের কাজ চলছে। কালো জমিনের ওপর বাহারি নকশার ভারী কাজ। প্রতিটি বোরকার জন্য মজুরি নিচ্ছি ১ হাজার টাকা করে।’’

কি কি উপকরণ ব্যবহার করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, রঙিন সুতো, ধাতব নল, বহুমাত্রিক মোটিভ, পাথর, পুঁতি, মতি, প্লাস্টিকের পুঁতি, কদু পুঁতি ইত্যাদি।

কলোনির শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয় সপ্তাহ হিসেবে, শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার। শুক্রবার ছুটি। একেকজন কারিগর ১ সপ্তাহে পারিশ্রমিক পান সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। শিশুশ্রমিকেরা পায় ৭০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। ছোটরা মূলত কারিগরদের সহযোগিতা করে, আর বড় হয়ে কারিগর হওয়ার স্বপ্ন দেখে। জানালেন পাপ্পু।

কলোনির পাশেই ইউনিসেফ স্কুল। সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে মোহাম্মদ ইমন (১১)। মনোযোগ দিয়ে কালো জমিনে রঙিন পুঁতি বসানোর কাজ করছিল সে। চোখেমুখে রাজ্যের কৌতুহল। জানতে চাইলে বলে, ‘‘এখন কাজ শিখছি। বাবা সিএনজি অটোরিকশা চালান। মা গার্মেন্টসে কাজ করেন। সপ্তাহে ৮০ টাকা পাই।’’

ইমনের মালিক জানান, ‘‘ওরা কাজ শিখছে। তবে স্কুলে যেতে আমরা উৎসাহিত করি। কোনো বাধা দিই না। স্কুল টাইমে ওদের ছুটি দেওয়া হয়।’’

ঝাউতলা স্টেশন রোডের দোতলায় কারখানা মো. খালিদ জাফরের। ৮ জন কর্মী কাজ করছেন মেঝেতে বসে কাঠের ফ্রেমে টানটান করে রাখা ফ্রকের কাপড়ে। কাপড়ে লাগানো কাচের টুকরায় আলো টিকরে পড়ছে।

খালিদ জাফর বলেন, ‘‘এবার জারদৌসি (স্প্রিংয়ের কাজ) ও কারচুপির কাজ হচ্ছে বেশি। পাশাপাশি গ্রাহকদের পছন্দের নকশায় বৈচিত্র্যময় কাজও চলছে সমানে। ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে মজুরি। ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। কম দামি কাজগুলো তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। বেশি দামি কাজগুলো হয় জটিল, শ্রমঘন। তাই ১ সপ্তাহও লেগে যায় একেকটি কাপড়ের কাজ শেষ করতে।’’

এতো কাজের অর্ডার কিভাবে পান জানতে চাইলে বলেন, ‘‘মিমি, সেন্ট্রাল প্লাজা, নিউ মার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজারসহ প্রায় সব বড় মার্কেট থেকে আমরা অর্ডার নিয়ে আসি। ক্যাটালগ দেখে কাজ করি। এর বাইরে কিছু শৌখিন গ্রাহক আছেন, যারা পছন্দের কাপড় কিনে সোজা আমাদের কাছে চলে আসেন।’’

শিল্পের দুর্দিনের ছায়া জাফরের চোখেমুখে। বলেন, ‘‘১৭ বছর ধরে এ পেশায় আছি। এখন শাড়ির কাজ করে পোষাতে খুব কষ্ট হয়। এক সময় শুধু শাড়ির কাজই করতাম। এখন ভারত থেকে রেডিমেড শাড়ি আসছে। উন্নতমানের মেশিনে কম্পিউটার ডিজাইনে কাজ করা। আমাদের প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বাড়ছে পাইকারি বাজারে। কিন্তু কাজের দাম যেন দিন দিন কমছে। নিজেরাই কম দামে কাজ নিতে প্রতিযোগিতা করছি। এটা অশনি সংকেত।’’

তিনি বলেন, ‘‘এক সময় বিহারি কলোনির প্রতিটি ঘরেই শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজে নকশা করা হতো। এখন সেই দিন নেই। হাতে গোনা ১৫ থেকে ২০টি কারখানা পাবেন। ঘরে ঘরে মা-বোনদের কাজ করার চল উঠে গেছে। মেয়েরা এখন গার্মেন্টসে কাজ করে, কলোনিতে নয়।’’

মোহাম্মদ রাশেদ ঘরেই শ্রমিক লাগিয়ে কাজ করেন শাড়ি-থ্রিপিচের। ৭ থেকে ৮ বছরের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নকশা ও কারুকাজে এবার সোনালি রঙের প্রাধান্য বেশি। বিশেষ করে শাড়ি ও থ্রিপিচে। এর বাইরে মাল্টি কালারের কাজও হচ্ছে। মূলত সুতা, চুমকি, পুঁতি, নলি, ধপকা, পাথর দিয়েই চলছে ভিন্নধর্মী নকশার কাজ।

রাশেদ আড়াই হাত বহরের ৭ গজ লম্বা একটি জর্জেট কাপড়ে ক্যাটালগ অনুযায়ী কাজ করতে মজুরি নেন সাড়ে ৩ হাজার টাকা। থ্রিপিচের গলা, পিঠ ও হাতের কাজের জন্য নেন সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা। মূলত নকশার ওপর নির্ভর করে মজুরির হার।

বড়দের মুখে পেশার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা উঁকি দিলেও স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সালমার আছে অনেক স্বপ্ন। সে ইতিমধ্যে শিখে নিয়েছে কারচুপির কাজের খুঁটিনাটি অনেক বিষয়-আশয়। নিখুঁত ভাবে করতে পারে থ্রিপিস ও শাড়ির নানা কাজ। তারপরও তার মজুরি সপ্তাহে মাত্র ৫০ টাকা।

কলোনির প্রবীণ বাসিন্দা আলফাজ জানান অন্য কথা। তিনি বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই বংশ পরম্পরায় এখানে পোশাকের ওপর নানা ধরনের কাজ হতে দেখে আসছি। এখন যেটা আধুনিক কয়েক বছর পর সে জায়গায় আসে নতুনত্ব। আবার কয়েক যুগ পরে আবার নতুন রূপে ফিরে আসে পুরোনোটাই। এভাবে চলে আসছে। এখন হয়তো কিছুটা ভাটা পড়েছে। তারপরও নতুন প্রজন্মের অনেকে শিখে নিচ্ছে কাজ। এভাবেই হয়তো টিকে থাকবে এ পেশা।’’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ