1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৪১ অপরাহ্ন

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের শর্ত মানা হচ্ছে না কুইক রেন্টালের চুক্তিতে

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১১ জুলাই, ২০১২
  • ৬৮ Time View

২০১০ সালের মে-জুলাইয়ে ১২টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের `কুইক রেন্টাল` বা দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে।

আশু চাহিদা মেটাতে জরুরি ভিত্তিতে ওই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে হাজার থেকে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল বিদ্যুৎ বিভাগের পরিকল্পনা অনুমোদন করলেও খুলনা ও ঘোড়াশালে ব্রিটিশ কম্পানি এগ্রিকো ছাড়া কেউই ওই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারেনি। অনেকে পরের বছরে, কেউ কেউ প্রায় দুই বছর পর বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। তবে সব ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের বাইরে বেশি দরে চুক্তি হয়েছে। যে চারটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্যোক্তা বাছাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নেওয়া হয়, বাস্তবে তার কোনোটিই অনুসরণ করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের আলোকে স্বল্পমেয়াদি চুক্তি হলে কুইক রেন্টাল নিয়ে এত সমালোচনা এবং দেশ আর্থিকভাবে দেউলিয়া হতো না বলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাবি করেন।

রেন্টাল থেকে কুইক রেন্টাল : ২০১০ সালের মধ্যে `জিরো লোডশেড`-এর লক্ষ্য নিয়ে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি পরিকল্পনায় ২০০৯ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে বিদ্যমান বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলায় `ফার্স্ট ট্র্যাক` ভিত্তিতে দেশের আটটি স্থানে ৫৩০ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে উচ্চ দরের কারণে সামিটসহ বিদ্যুৎ খাতের প্রতিষ্ঠিত কম্পানিগুলো সফলকাম হয়নি। দরপত্র নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তারা অনুমোদিত পরিকল্পনার বাইরে কুইক রেন্টালের নামে দরপত্র ছাড়া ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব বিদ্যুৎ বিভাগকে গেলাতে সক্ষম হয়।

বিদ্যুৎসচিব আবুল কালাম আজাদ ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর জন্য যে দুই পৃষ্ঠার সার-সংক্ষেপ তৈরি করেন, তাতে বিদ্যুতের আশু চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দ্রুত (ডিসেম্বর ২০১০ সালের মধ্যে) উৎপাদনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে কয়েকটি কার্যব্যবস্থার প্রস্তাব করেন। এগুলো হলো :

ক. ভাড়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনকারী বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে ৪-৬ মাসের মধ্যে ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ১-২ বছরের জন্য উৎপাদনের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এ প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে যোগাযোগ/ দর কষাকষি, সরেজমিনে পরিদর্শনসহ ক্রয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার জন্য বিদ্যুৎসচিব/অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে এনবিআর, আইন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পিডিবির প্রতিনিধি এবং বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিবকে নিয়ে কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়। কমিটিকে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ই-মেইলে প্রাথমিক যোগাযোগ করে চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দেশে গিয়ে দর কষাকষি এবং প্লান্টসমূহ সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঐকমত্যে পৌঁছালে প্রাথমিক চুক্তি অনুস্বাক্ষরের কথা বলা হয়।
খ. ৬-৯ মাসের মধ্যে ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট ৩-৫ বছর মেয়াদি রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। বলা হয়, ভাড়ায় স্থাপনের লক্ষ্যে পাঁচটি অযাচিত প্রস্তাব বর্তমানে আছে। এদের কেউ কেউ সাম্প্রতিক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের টেন্ডারে অনুমোদিত সর্বনিম্ন মূল্যের সমান বা তার চেয়ে কমমূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রস্তাব দিচ্ছে। তবে ভাড়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে প্রতিষ্ঠানসমূহের যেরূপ যোগ্যতা চাওয়া হয়েছিল তাদের অনেকেরই সে যোগ্যতা নেই। কমমূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রস্তাব দেওয়ায় বিশেষ বিবেচনায় আবেদন গ্রহণ করা যায়। তবে রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অনুমোদিত দরে ও অনুরূপ শর্তে এসব অযাচিত প্রস্তাবকারীকে কার্যাদেশ দেওয়া যায়। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

গ. রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য সম্প্রতি যাদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের কেউ একই মূল্যে অধিক বিদ্যুৎ দিতে সম্মত হলে ক্যাপাসিটি বাড়ানোর অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা অথবা আগ্রহী হলে নতুন জায়গার জন্যও অনুমতি দেওয়া যায়। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

ঘ. সম্প্রতি ডিজেল এবং ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক ৩ ও ৫ বছর মেয়াদি কয়েকটি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কার্যাদেশ প্রদত্ত মূল্যে (সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল্যের মধ্যে) বিদ্যুৎ ক্রয়ের লক্ষ্যে স্বল্প সময়ের বিজ্ঞপ্তি জারি করে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র যাচাই করে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য একাধিক প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেলে লটারির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান মনোনীত করা যেতে পারে। একক দর পাওয়া গেলে এবং প্রতিষ্ঠান যোগ্য বিবেচিত হলে মনোনীত করার পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। সব ক্ষেত্রেই ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির মাধ্যমে চুক্তি চূড়ান্ত করার কথা বলা হয়।

২ এপ্রিল বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর স্বাক্ষরের পর প্রধানমন্ত্রী ৬ এপ্রিল সার-সংক্ষেপে মন্তব্যসহ স্বাক্ষর করেন। প্রধানমন্ত্রী লেখেন : “কি কি প্রস্তাব হাতে আছে, তাদের অতীত রেকর্ড কি ইত্যাদি যাচাই বাছাই করে কাজ দেওয়া যায়। লটারি করা হবে কি না তা প্রস্তাবগুলো দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। দ্রুত কারা করতে পারবে সেটাই তার বিবেচ্য বিষয়। বিদ্যুৎ সমস্যাটা প্রকট এ কথা মনে রাখতে হবে।”

কিন্তু বিদ্যুৎসচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি বিদেশি আর কোনো কম্পানির সঙ্গে ৫০০-৬০০ মেগাওয়াটের চুক্তির জন্য যোগাযোগ না করে কেবল এগ্রিকোর সঙ্গেই ১-২ বছরের স্থলে তিন বছরের জন্য ২০০ মেগাওয়াটের চুক্তি করেছে। দরপত্রে ডিজেলে প্রতি ইউনিট ১৩.৭৪২৬ টাকায় চুক্তি হলেও এগ্রিকোর সঙ্গে ১৪.৪০২৫ টাকায় চুক্তি করা হয়েছে।
আর দেশীয় কম্পানির সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত তিনটি প্রক্রিয়ার কোনোটিই অনুসরণ করা হয়নি।
৬-৯ মাসের মধ্যে ৫০০-৬০০ মেগাওয়াটের জন্য ৩-৫ বছর মেয়াদি রেন্টাল চুক্তির অনুমোদন থাকলেও এক হাজার ৭ মেগাওয়াটের চুক্তি করা হয়েছে। দরপত্রে ফার্নেস অয়েলে বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দর ৭.২৯০৯ টাকা হলেও ৭.৭৮৫ টাকায় চুক্তি করা হয়েছে।

পুরো প্রক্রিয়াটিই অস্বচ্ছ এবং কমিটির সদস্যদের ব্ল্যাকমেইল করে চুক্তির প্রস্তাবে সুপারিশে বাধ্য করা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সভা ছাড়াই বিদ্যুৎ বিভাগের তৈরি কার্যবিবরণীতে কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর দিতে হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিভাগের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠবে বলে কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ