1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০৬ অপরাহ্ন

১৭ লাখ টাকায় ভুল চিকিৎসা অ্যাপোলোতে গর্ভের সন্তানসহ মা হওয়ার ক্ষমতা হারালেন প্রসূতি

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৭ জুলাই, ২০১২
  • ৮৩ Time View

রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত গর্ভের সন্তানকে তো বটেই স্থায়ীভাবে মা হওয়ার ক্ষমতাও হারালেন এক প্রসূতি। গর্ভের শিশু স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও প্রায় চার মাসের ওই প্রসূতির ডিঅ্যান্ডসি (ডিলেশন অ্যান্ড কিউরিটেজ) করতে গিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে তার জরায়ু।

এর ফলে আর কোনোদিনই তিনি মা হতে পারবেন না।

সূত্র জানায়, ডিঅ্যান্ডসির সময় দুই দফা অপারেশনে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন মৃত্যুর দুয়ারে। লাইফ সাপোর্টে থেকে কোনোক্রমে বেঁচে গেছেন। আর এসব প্রক্রিয়ার নামে ওই রোগীর কাছ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১২ দিনে প্রায় ১৭ লাখ টাকা আদায় করে নিয়েছে।

দেশের চিকিৎসাক্ষেত্রে এমন ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যয়বহুল হাসপাতালের ফার্টিলিটি সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর ও গাইনোকলজির সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মৃণাল কুমার সরকার ও প্রসূতির চিকিৎসা করেন। এই চিকিৎসকই আরেক রোগীর টিউমার অপারেশনকালে পেটের ভেতরে কাপড় জাতীয় দ্রব্য রেখে সেলাই করে দিয়েছিলেন এমন অভিযোগ আগে থেকেই রয়েছে।

ভুক্তভোগী প্রসূতির স্বামী একজন ব্যবসায়ী। সামাজিক অবস্থান ও মানসিকভাবে সংকোচবোধের কারণে নিজের নাম-পরিচয় প্রকাশ না করে এসব কথা জানিয়েছেন।

ক্ষোভে-দুঃখে আবেগতাড়িত হয়ে ওই ব্যবসায়ী বলেন, `স্ত্রী-সন্তানের ভালোর জন্য আমার ব্যয়বহুল জেনেও এ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু টাকার লোভে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার স্ত্রীর জীবন সংশয় তো বটেই, আমাদের পুরো পারিবারিক শান্তি কেড়ে নিয়েছে। তারা সাধারণ চিকিৎসার স্থলে আমার স্ত্রীর মনে নানা ভয়-ভীতি ঢুকিয়ে একদিকে আমার সুস্থ সন্তান হত্যা করেছে। অন্যদিকে আমার স্ত্রী চিরবন্ধ্যা হয়ে গেছে। উপরন্তু তাকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল মৃত্যুর দুয়ারে। একমাত্র আল্লাহ আমার স্ত্রীর জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি শুধু চাই ওই চিকিৎসক নামধারী লোকটি যেন আর কারো জীবন নিয়ে এমন কাণ্ড করতে না পারে। সেই সঙ্গে কামনা করব, কোনো হাসপাতাল যেন রোগীর সঙ্গে টাকার খেলায় মেতে না ওঠে।`

চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র থেকে দেখা যায়, ওই ব্যবসায়ীর ৩৩ বছর বয়সী স্ত্রীকে এ বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি এ্যাপোলো হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় তিনি ১৪ সপ্তাহ পাঁচ দিনের গর্ভবতী ছিলেন। কিন্তু তার রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। ঝুঁকি ছিল গর্ভপাতেরও। তবে গর্ভের সন্তান ছিল সুস্থ ও স্বাভাবিক। এর আগেও সিজারিয়ানের মাধ্যমে তার দুটি সন্তান জন্ম নেয়। ফলে রোগীর অবস্থা কিছু জটিল ছিল।

ওই ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, এ্যাপোলো হাসপাতালের ডা. মৃণাল কুমার সরকারের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। বাসা থেকে টেলিফোনে তাকে জানানো হয়ে যে রোগীর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ডা. মৃণাল তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। হাসপাতালে আনার পর ডা. মৃণাল তাকে জানান যে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। গর্ভের শিশু ভালো ও স্বাভাবিক আছে। কোনো সমস্যা হবে না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হবে। এরপর হরমোনজনিত কয়েকটি ইনজেকশন দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে জানানো হয়, মাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখার স্বার্থে ডিঅ্যান্ডসির মাধ্যমে গর্ভের শিশু নষ্ট করে ফেলার প্রয়োজন হতে পারে। এ সময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে স্ত্রীকে ঝুঁকিমুক্ত রাখার স্বার্থে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু নানা অজুহাতে ভর্তির চার দিন পর ২ মার্চ তাঁকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। ডিঅ্যান্ডসি শেষে রোগীকে পর্যবেক্ষণ ইউনিটে নেওয়ার পর নার্সরা জানান, রোগীর ফের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ সময় একজন চিকিৎসক গোপনে রোগীর স্বজনকে জানান, ডিঅ্যান্ডসির সময় ডা. মৃণাল অসাবধানতাবশত লুনার জরায়ু নষ্ট করে ফেলেছেন। ফলে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ সময় জরুরিভাবে রক্তক্ষরণ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বললে ডা. মৃণাল জানান, আবারও অস্ত্রোপচার করতে হবে। দুই দফা অস্ত্রোপচারের পর রোগীর জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এর দু-তিন দিন পর চিকিৎসকরা ওই ব্যবসায়ীকে জানান, রোগীর অবস্থা এতটাই সংকটাপন্ন হয়েছিল যে তার জরায়ু ফেলে দিতে হয়েছে। ফলে লুনা আর মা হতে পারবেন না।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, গর্ভের শিশু জীবিত ও স্বাভাবিক থাকা অবস্থায় ডিঅ্যান্ডসি বা গর্ভপাত করানো শিশু হত্যার শামিল। আর ডিঅ্যান্ডসির সময় জরায়ু কেটে ফেলা নজিরবিহীন ঘটনা। তাই কোথাও এমন ঘটনা ঘটে থাকলে ওই চিকিৎসকের দক্ষতা ও যোগ্যতা খতিয়ে দেখা দরকার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শায়েলা শামীম বলেন, `চিকিৎসক হিসেবে আমার দীর্ঘ সময়ে এমন ঘটনার কথা শুনেছি বলে মনে পড়ে না। এটা খুবই অবাক হওয়ার মতো একটি কাজ। কোনো দক্ষতাসম্পন্ন চিকিৎসক হলে প্রায় চার মাসের সুস্থ বাচ্চাকে ডিঅ্যান্ডসি করার পরামর্শ দিতে পারেন না। আর ডিঅ্যান্ডসির সময় জরায়ু কেটে যাওয়া বা নষ্ট হওয়ারও কথা নয়।`

প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জেবুন নেসা রহমান বলেন, `অনেক সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বন্ধ করা না গেলে জরায়ু ফেলে দিয়ে রোগী ও মাকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। কিন্তু শিশু ও জরায়ু দুটোই একেবারে ফেলে দেওয়ার ঘটনা খুবই কম। দক্ষ চিকিৎসক হলে এমন পর্যায়ে যাওয়ার আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।`

ওই ব্যবসায়ী জানান, এ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে ১১ মার্চ তার স্ত্রীকে রিলিজ করার পর তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাদের জানিয়েছেন কেবল চিকিৎসকের অদক্ষতা ও অসতর্কতার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে গতকাল শুক্রবার ডা. মৃণালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওই রোগী চিনতে পারলেও তার চিকিৎসা-সংক্রান্ত অভিযোগ স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেননি। তিনি বলেন, `এই মুহূর্তে আমার পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়। কাগজপত্র দেখতে হবে।`

এদিকে ডা. মৃণাল সম্পর্কে এ্যাপোলো হাসপাতালের (ঢাকা) একটি প্রচারপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, `ডা. মৃণাল কুমার সরকার, এমবিবিএস, ডিজিও, এফসিপিএস, ফেলো রিপ্রোডাক্টিভ মেডিসিন অ্যান্ড অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাক্টিভ টেকনিকস, কেকেআইভিএফ, সিঙ্গাপুর, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, অবসটেট্রিকস অ্যান্ড গাইনোকলজি; কো-অর্ডিনেটর : ফার্টিলিটি সেন্টার-এ্যাপোলো হাসপাতাল।`

ডা. মৃণাল কুমার জানান, তিনি ১৯৮২ সালে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন এবং পরে ২২ বছর দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চাকরির পর এ্যাপোলো হাসপাতালে যোগ দেন। তার সর্বশেষ সরকারি কর্মস্থল ছিল খুলনা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।

প্রসঙ্গত, ডা. মৃণাল এর আগে ২০০৯ সালের ১৯ আগস্ট রিপা নামের এক রোগীর ডিম্বাশয়ে টিউমার অপসারণ করেন। এ সময় তিনি রোগীর পেটের ভেতরে মব (অপারেশনকালে ব্যবহৃত কাপড়ের টুকরো) রেখেই পেট সেলাই করে দেন। গত চারটি বছর অসহ্য যন্ত্রণায় ভুগতে হয় রিপাকে। অবশেষে সম্প্রতি রংপুর মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. সৈয়দ মো. আবু তালেব রিপার পেটে অপারেশন করে ওই মব বের করেন।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ