ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে শুরু হয়েছে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের দৌড়-ঝাঁপ।
আগামী ১১ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ কাউন্সিলের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংগঠনের নেতৃত্বের আসনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে কেন্দ্রীয় কমিটির পদের আশায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের প্রভাশালী নেতাদের কাছে নানাভাবে ধরনা দিচ্ছেন অনেকে।
কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদের জন্য এক ঝাক তরুণ নেতা ইতোমধ্যে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। বিশেষ করে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে কয়েকজন করে নেতা লর্বিং শুরু করেছেন।
প্রকাশ্যে পদের দাবি না করলেও ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহলে লবিং করছেন অনেকে। কেউ কেউ সরাসরি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদয় দৃষ্টি পাওয়ার চেষ্টা করছেন্। কারণ, আগামী দিনের কমিটিতে কে কোন পদে আসবেন. কে হবেন সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তা নির্ধারণ করে দেবেন শেখ হাসিনা।
সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটি আওয়ামী লীগের সভাপতির পরামর্শ ও তালিকা অনুযায়ীই গঠন করা হয়।
এ কারণেই যারা সরাসরি শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না, তারা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের মাধ্যমে তদবির-লবিংয়ের চেষ্টা করছেন।
তবে সূত্র জানায়, এবারের কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি আফম বাহাউদ্দিন নাছিমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আস্থাভাজন। কাজেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যাকে বাহাউদ্দিন নাছিম যাকে চাইবেন, তিনিই হবেন বলে সংগঠনের নেতাকর্মীরা মনে করছেন।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফম বাহাউদ্দিন নাছিম গত তিন বছর আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন। তিনি সভাপতির পদ ছেড়ে দেওয়ায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোল্লা মুহাম্মদ আবু কাউসার।
নতুন কমিটিতে তার সভাপতি পদে আসার কথা শোনা যাচ্ছে। সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথের নামও সভাপতি পদে জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে।
এই দু’টি নামের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক লীগের বাইরে থেকে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর ব্যাপারীর নামও শোনা যাচ্ছে সভাপতি পদে।
সাধারণত সংগঠনের ভেতর থেকেই সভাপতি-সধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হলেও সংগঠনের কাউন্সিলের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর সভাপতি পদে বাহাদুর ব্যাপারীর নাম আলোচিত হচ্ছে।
এর বাইরে বর্তমান কমিটিতে আছেন, এরকম আরো দুই একজনের নামও সভাপতি পদে শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন, সৈয়দ নুরুল ইসলাম, ম. আব্দুর রাজ্জাক ও মফিজুর রহমান্।
একই ভাবে সাধারণ সম্পাদক পদে বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন, মতিউর রহমান মতি, মিজানুর রহমান মিজান, গিয়াসউদ্দিন পলাশ, নির্মল রঞ্জন গুহ, সাইমুম সরোয়ার কমল, সাইদুর করিম মিন্টু, গোলাম সরোয়ার মামুন ও অ্যাডভোকেট তাপস পাল।
এদিকে কাউন্সিলে বর্তমান কমিটি থেকে অনেকই বাদ পড়বেন, আবার অনেকেই সাংগঠনিক কাজের মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আসতে পারেন বলে সংঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
যেমন বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, সংগঠনিক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন পলাশ, গোলাম সারোয়ার মামুন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক সাইমুম সারোয়ার কমল, সহ-দফতর সম্পাদক প্রবাল রায়, কার্যনির্বাহী সদস্য নজরুল ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের অনেকেই ভুমিকা রয়েছে। বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে সার্বক্ষণিক মাঠে ছিলেন বলে কর্মীরা মনে করেন।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবার বেশ কিছু নতুন মুখ আসতে পারে বলে জানা গেছে। ছাত্রলীগের গত দুই কমিটি থেকে বিদায়ী ছাত্রনেতাদের অনেকেই স্বেচ্ছাসেবক লীগে ঠাঁই পেতে পারেন।
এ জন্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান ১০১ দদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।ে এছাড়া ১৪ সদস্যের সহসভাপতির সংখ্যাও বাড়ানোর কথা শোনা যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। আশা করছি, উৎসবমুখর পরিবেশে বর্ণাঢ্য সম্মেলন হবে। সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব আসবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে নির্দেশ দেন, সেভাবেই সংগঠন পরিচালিত হবে।
দীর্ঘ দিন ধরেই আওয়ামী লীগের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের মতো স্বেচ্ছাসেবক লীগও মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে। সংগঠনটির সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালের ২৭ জুলাই।