সহজ শর্তে ব্যাংকগুলোর আবাসন ঋণ দেওয়া উচিত । পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ব্যাংকগুলো সবচেয়ে কম সুদে আবাসন ঋণ দিয়ে থাকে। কারণ, অধিকাংশ মানুষের স্বপ্ন থাকে একটি প্লট বা ফ্ল্যাটের। আবাসন খাত সরকার ও রাজউকের সহযোগিতা ছাড়াই বিকাশ লাভ করেছে। এখন দেশের স্বার্থে আবাসন খাতকে সহযোগিতা করার সময় এসেছে বলে গোলটেবিল সেমিনারে বক্তারা মত প্রকাশ করেছেন।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘আবাসন শিল্পের বর্তমান সংকট ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের করণীয় দিক’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল এমপি।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে দৈনিক আমাদের অর্থনীতির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক অাবিদ রহমান বলেন, উন্নত দেশগুলোতে আবাসন ব্যবসায়ীরা মডেল টাউন গড়ে তোলেন। অথচ এদেশে কেন যেন সরকার ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান আবাসন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করে। অথচ সরকার দেশের আবাসন ব্যবসায়ীদের নিয়ে ঢাকা শহরকে পরিকল্পিতভাবে গড়তে পারে।
দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা এই সাংবাদিক বলেন, ‘‘আমি প্রবাসে থাকার কারণে দেখেছি, উন্নত দেশগুলোর সরকার চায় যে সবার মাথার ওপরে থাকার ছাদ থাকুক। আমেরিকায় ব্যাংকগুলো থেকে ১ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয় বাড়ি করার জন্য। অথচ বাংলাদেশে ১৮ থেকে ২২ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়। ব্যাংকগুলোকে সহজ শর্তে ঋণ দেবার উদ্যোগ নিতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে বলবো, রাজউকে গেলে একটি প্ল্যান পাস করাতে ৩ থেকে ৪টি জুতো ক্ষয় হয়। একজন আর্কিটেক্ট রাজউকে বারবার ধরনা দেন অনুমোদনের জন্য।রাজউক সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও অবকাঠামো ছাড়াই প্রকল্প তৈরি করে। অথচ যে কোনো শহর গড়তে প্রথম দরকার যোগাযোগ ব্যবস্থা।’’
রাজউকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘রাজউক তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। এখন বিকল্প ভাবার সময় এসেছে। রাজউককে তার করণীয় সঠিকভাবে করতে হবে। আবাসন খাতের জন্য প্রতিবন্ধকতা নয়, বরং সহযোগী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।’’
গড়ব বাংলাদেশের আহবায়ক অধ্যাপক ড. শাহেদা সেমিনারে বলেন, ‘‘আবাসন শিল্পের সংকটকে সাধারণ মানুষের সংকট মনে করি।আবাসনের জন্য ব্যাংক থেকে ১৬ থেকে ১৯ শতাংশ সুদে ফ্ল্যাট কিনলে অনেকের নাতিও সে ঋণ শোধ করতে পারবেন না। ছোট একটু আশা- ভালোবাসা আর একটা ভালো মানের বাসা সবাই চান। এজন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।’’
এই শিক্ষাবিদ বলেন, আমেরিকায় বাড়িভাড়ার টাকায় বাড়ি করা যায়। এ দেশেও সেটা সম্ভব। এ দেশের মানুষ সুইমিং পুল ও টেনিস বল খেলার সুবিধাসহ বাড়ি চান না। ছোট্ট একটা বাড়ি চান । ব্যাংকগুলো আন্তরিক হলে ঋণের মাধ্যমেই তা করা সম্ভব।
সেমিনারে সৌদি-বাংলা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ নেওয়াজ ভূঁইয়া নাসির বলেন, ‘‘আমি একজন ছোট আবাসন ব্যবসায়ী। গত ১০ বছর আমি এই সেক্টরে কাজ করছি। আমি দেখছি, সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আবাসন সেক্টরের জন্য সহযোগিতা করছে না । অথচ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মতো বিশ্বমানের মডেল টাউন ও বসুন্ধরা সিটির মতো মার্কেট আবাসন ব্যবসায়ীরাই গড়ে তুলেছেন। এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই।’’
তিনি বলেন, ‘‘সরকার সহযোগিতা করলে এরকম আরো মডেল টাউন গড়ে উঠতো।দেশের উন্নয়ন হতো। আবাসন সেক্টর এখন নানা নেতিবাচক প্রচারণায় মন্দা মোকাবিলা করছে। সরকারের সহযোগিতায় বিদেশি কোম্পানি দেশে বিনিয়োগ করছে। সরকারকে আবাসন সেক্টরে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীকে সমান সুযোগ দিতে হবে।যদিও দেশের স্বার্থে দেশি উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদের বেশি সুবিধা পাবার কথা।তাই আমাদের অনুরোধ, সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ শিল্পের পাশে দাঁড়ান। এ শিল্পের সঙ্গে অনেক সেক্টর ও কোটি মানুষের কর্মসংস্থান নির্ভরশীল।’’
আইকন হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রিহ্যাব সদস্য নুরুল হুদা বলেন, একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০৩০ সালে ঢাকার জনসংখা বর্তমানের দ্বিগুণ হবে। অর্থাৎ জনসংখ্যা ৪ থেকে ৫ কোটি হবে। সেভাবে ঢাকার আবাসন সংকট মেটাতে প্রাইভেট ও সরকারি সেক্টরকে ভূমিকা রাখতে হবে। সরকার ও বেসরকারি খাতকে সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যেমে ঢাকাকে সুন্দর বাসযোগ্য করা সম্ভব।
নুরুল হুদা বলেন, ‘‘এক দেশে দুই নীতি চলতে পারে না। আবাসন সংকট মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি সবার জন্য এক নীতিমালা প্রযোজন। রিহ্যাবের বিল্ডিং স্ট্যান্ডিং কমিটির মেম্বার হিসেবে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, নানা প্রতিবন্ধকতা। সাহারা গ্রুপ সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে। অামরা একে স্বাগত জানাই। আমাদেরও একই রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হোক।’’
ইসলামিক টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার ফরিদুল আকবর বলেন, আবাসন ব্যবসায়ীরা কাজ করবেন, সরকার সহযোগিতা করবে। না পারলে সেটা সরকারের ব্যর্থতা। আমার মনে হয়, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ আবাসন সেক্টরের বিরুদ্ধে চলে গেছে। হাউজ বিল্ডিং ফিন্যান্স করপোরেশন কিছু কাজ করেছে। বসুন্ধরা সিটির মতো আবাসিক এলাকা গড়ে ওঠার পর তারাও ধীরে ধীরে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।’’
‘আগামী দিনের ঢাকা কেমন হতে পারে’ সে বিষয়ে সেমিনারে ১০ মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। আমাদের অর্থনীতির বিশেষ সম্পাদক কামরুল হাসান নাসিম এ ডকুমেন্টারি পরিচালনা ও সেমিনারটির সঞ্চালনা করেন।