আফসোস ক্যাচগুলো তালুবন্দী হলো না

আফসোস ক্যাচগুলো তালুবন্দী হলো না

বডি-লাইনে যে বলগুলো পড়েছে সেগুলো দেখতে বেশ লাগছিলো। জমে যাওয়া শীতেও গ্যালারিতে ইস, মাঠে উহ শব্দে রোমাঞ্চকর পরিবেশ তৈরি করে। আচমকা কানের পাশ দিয়ে বল বেরিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাটসম্যানরাও আঁতকে উঠেন। শেষ সেশনের দুটি স্পেলের ওই দৃশ্য দৃষ্টিনন্দন ছিলো।

বাংলাদেশ দলের পেসাররা যে গতিতে বল করেন, তাতে মিসবাহ উল হক এবং ইউনুস খানের ভয় পাওয়ার কথা নয়। তারপরেও যা হলো তা পুলকিত হওয়ার মতোই। যে কয়টি বল পিচের ওপর লাফিয়ে শরীরের দিকে গেছে লাইন-লেন্থের জন্যই। তারা যে বাহুর জোড়ে বডি-লাইনের ওপর বল করতে পেরেছেন তা নয়। নির্দিষ্ট একটি জায়গা ধরে বল করে যাওয়ার সুফল ওটা। বাংলাদেশ দলের পরিকল্পনাও ছিলো লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে বল করা, যাতে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা খুব বেশি রান তুলতে না পারে। কুয়াশা এবং বাতাসের সুবিধা নিয়ে পেসাররা ‘টিম রুলস’ মেনে বল করেছেনও।

সাত বছর পর দ্বিতীয় টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া স্লো মিডিয়াম পেসার নাজমুল হোসেনের শেষ স্পেলের সবগুলো ডেলিভারি দেখতে দারুণ ছিলো। ৭-২-১১-১ স্পেলটি মনে রাখার মত। সাত ওভারে দুটি মেডেন, ১১ রান দিয়ে একটি উইকেট পেয়েছেন। মিসবাহ এবং ইউনুসকে অন্তত চারবার ভয় পাইয়ে দিয়েছেন। দুই একবার তো উইকেট পেতে পেতেও পেলেন না। দিনের খেলা শেষে দুই দলের খেলোয়াড়দের যে সংবাদ সম্মেলনে হয় তাতে বাংলাদেশ দল থেকে নাজমুলকেই নিয়ে আসা হয়। এথেকেও পরিষ্কার বোঝা যায় টিম ম্যানেজমেন্টও জাতীয় দলের এই পেসারের ওপর খুশি।

রোজকার মত কুয়াশার ফাঁদে কাঁটা পরেছে সকালের সোয়া একঘণ্টা। পৌঁনে ১১টায় বল মাঠে গড়ায়। বেল ফেলে দিনের খেলা সমাপ্ত ঘোষণার পূর্বে ৬৯ ওভার খেলা হয়। পাকিস্তান ২০৫ রান তোলে দুই উইকেট হারিয়ে। সফরকারী দলের ব্যাটসম্যানরা কতটা ধীরস্থির থেকে ব্যাট করেছেন, রান দেখে তা অনুমেয়। রোববারের ৮৭ রান মিলে পাকিস্তানের সংগ্রহ তিন উইকেটে ২৯২ রান।

পাকিস্তান দলকে তৃতীয় দিন ৬৯ ওভারে যে ২০৫ রানের বেশি করতে দেয়নি, ওটা বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশ দলের একটি সফল দিন গেছে। আবার মিস-ফিল্ডিং দেখলে খুবএকটা ভালো হয়নি। তৌফিক উমরের ১৩০ রানের ইনিংসটি বাংলাদেশ দল আতিথীয়তার উপহার হিসেবে দিয়েছে বলা যায়। তিনবার জীবন পেয়ে তৌফিক ওই রান করেছেন ২৫৬ বলে। ব্যক্তিগত ৫৬ রানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো তৌফিকের ইনিংস। সাকিবের বলে ক্যাচের আবেদন করতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং করতে ভুলে গিয়েছিলেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। লাঞ্চের পরে রবিউল ইসলামের প্রথম বলেই গালিতে ক্যাচ তুললে নাজিমউদ্দিন ফেলে দেন। কৈ মাছের প্রাণ হয়ে উঠা তৌফিক ১১৮ রানের সময় আরেকবার ক্যাচ তুলেছিলেন। ইলিয়াস সানিকে উইকেটটা উপহার দিতে পারলেন না শাহরিয়ার নাফীস। ১৩০ রানে পৌঁছানোর পর নাজমুলের বলটা বাতাসে ভাসিয়ে খেললে শাহরিয়ারের এবার তালুবন্দী করতে ভুল করেনি।

পাকিস্তানের এই ব্যাটসম্যান অভিষেক ইনিংসে শতক পেয়েছিলেন। ২০০১ সালে মুলতানের সে টেস্টে প্রতিপক্ষ ছিলো বাংলাদেশ। একদশক পর ক্যারিয়ারের সপ্তম টেস্ট শতকটি (লাকি সেভেন) পেলেন সেই বাংলাদেশের বিপক্ষে ঢাকায়।

দেশে এবং প্রতিপক্ষের মাঠে টেস্ট শতকের দারুণ এক অভিজ্ঞতা হলো তৌফিকের।

দিনশেষে ইউনুস খান ৪৮ রানে অপরাজিত হয়েই থাকলেন। পাকিস্তানের এই ব্যাটসম্যানকেও একবার সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ। ১৫ রানের সময় ডিপ-মিডউইকেটে ক্যাচ তুলেছিলেন, সাহাদাত বলের দিকে হাত বাড়ালেও তা মাটিতেই লুটিয়ে পড়ে। ভুলগুলো না হলে দিনের খেলার চিত্র অন্যরকমও হলেও হতে পারতো।

খেলাধূলা শীর্ষ খবর