পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগের দুর্নীতির প্রতিবেদন জমা দিতে সোমবার বাংলাদেশে আসছে কানাডার মাউন্টেড পুলিশ। শুক্রবার রাতে এ তথ্য জানিয়েছে দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র। জানা গেছে, বাংলাদেশের পথে রয়েছে কানাডা মাউন্টেন্ড পুলিশ।
সূত্র জানায়, কানাডা পুলিশের তদন্ত টিম এখন শ্রীলঙ্কায় আছে। বিশেষ একটি কাজে তারা শ্রীলঙ্কা গেছে বলে জানা গেছে। চলতি সপ্তাহের সোমবার তাদের বিমানযোগে বাংলাদেশে পৌঁছার কথা রয়েছে। আরও জানা গেছে, তদন্ত টিমে ৮/১০ জন সদস্য রয়েছে।
দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সোমবার দুপুরের আগে তাঁরা ঢাকায় পৌঁছে প্রথমে যাবেন বাংলাদেশস্থ কানাডীয় হাইকমিশনে। পরবর্তীতে সম্ভব হলে ২৫ তারিখেই ৫টার আগে দুর্নীতি দমন কমিশনে হাজির হবেন তাঁরা। অন্যথায় জুলাই মাসের ৩ তারিখ দুপুরের আগে তারা দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত হবেন।“
তিনি আরও জানান, দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে তাঁরা কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, কমিশনার মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ও মোঃ বদিউজ্জামানের সঙ্গে দেখা করবেন। তাছাড়া পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির মহাপরিচালক, পরিচালক এবং দুই অনুসন্ধান কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবেন।
কানাডার তদন্ত দল এ সময় তথ্য উপাত্ত গ্রহণ করার পাশাপাশি মৌখিক বক্তব্য নেবেন। দুদক সূত্রে জানা যায়, তাদের আতিথেয়তা দিতে কমিশন ইতিমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান জানান, কানাডিয়ান তদন্ত টিমের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তারা ২৫ জুন বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। যেদিন আসবেন সেদিন কিংবা ৩ জুলাই কানাডিয়ান পুলিশ দুদক কার্যালয়ে এসে তাদের তদন্ত রিপোর্ট হস্তান্তর করতে পারেন।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি মূল্যায়ন কমিটি পরামর্শক হিসেবে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নাম সুপারিশ করেছিল।
এর প্রথমটি ছিল এসএনসি-লাভালিন। অন্যগুলো হলো- যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান হালক্রো গ্রুপ ইউকে, নিউজিল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান একম অ্যান্ড এজেডএল, জাপানের ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট কোম্পানি লিমিটেড এবং যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসের জয়েন্ট ভেনচার কোম্পানি হাই পয়েন্ট রেলেন্ড।
এর মধ্যে এসএনসি-লাভালিনকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে অনুমোদনের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এর পরই এ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার সহায়তা স্থগিত করে দেয়। এ নিয়ে কানাডা পুলিশ এখনো তদন্ত করছে। আর তদন্তে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাংক এসএনসি-লাভালিনকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে।
বিষয়টি তদন্ত করতে বিশ্বব্যাংক থেকে কানাডা সরকারের কাছে অভিযোগপত্র পাঠানো হয়। এর ভিত্তিতে অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশকে। এরপর পুলিশ এসএনসি লাভালিনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ওই অফিসের ল্যাপটপসহ বেশ কিছু নথিপত্র জব্দ করে নিয়ে যায় এবং রমেশ এবং ইসআইল নামের দুই জনকে গ্রেফতার করে। জব্দ করা নথিপত্রের মধ্যে একটি ডায়েরিতে পদ্মা সেতুর পরামর্শক কাজ পেতে বাংলাদেশে যোগাযোগ করার জন্য একটি তালিকা পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে ওইসব তথ্য কানাডিয়ান পুলিশ বিশ্বব্যাংকের কাছে পৌঁছিয়েছে। একই রিপোর্ট হাতে পেতে দুর্নীতি দমন কমিশন অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে কানাডা সরকারের কাছে আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন। ওই আবেদনে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে এসে তদন্ত রিপোর্ট দুর্নীতি দমন কশিনের কাছে হস্তান্তর করতে সম্মত হয় কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ। এ বিষয়ে তারা দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কানাডা পুলিশের তদন্ত টিম এখন শ্রীলঙ্কায় আছে। বিশেষ একটি কাজে তারা শ্রীলঙ্কা গেছে বলে জানা গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে সোমবার তাদের বিমানযোগে বাংলাদেশে পৌঁছার কথা রয়েছে।