1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন

বাবরি মসজিদ রায় নিয়ে বিভক্ত ভারতের মুসলিম নেতৃত্ব

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৯
  • ১৮ Time View

ভারতে বাবরি মসজিদ-রামমন্দির মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পর প্রায় দেড়দিন হতে চললেও কীভাবে এই রায়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, তা নিয়ে দেশের শীর্ষ মুসলিম সংগঠনগুলোর মধ্যে তীব্র বিভক্তি দেখা যাচ্ছে।

মামলার অন্যতম পক্ষ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড এই রায় মেনে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।

কিন্তু তাদের আইনজীবীরা এবং অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড আবার এর বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করার কথা বিবেচনা করছেন।

অযোধ্যারই অন্যত্র মসজিদ বানানোর জন্য সুপ্রিম কোর্ট যে পাঁচ একর জমি বরাদ্দ করেছে তা নিয়েও মুসলিম সমাজের নেতারা একমত নন।

তারা কেউ বলছেন এই ‘দয়ার দান’ প্রত্যাখ্যান করা উচিত, কেউ আবার মনে করছেন ওই জমি নিয়ে সেখানে স্কুল-কলেজ বা হাসপাতাল গড়া দরকার।

বস্তুত সাতাশ বছর আগে অযোধ্যার যে বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানে বাবরি মসজিদ নির্মিত হয়েছিলো, ঠিক সেখানেই রামমন্দির বানানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ভারতের এক একটি প্রভাবশালী মুসলিম সংগঠন এক একভাবে দেখছে।

অন্যতম মামলাকারী সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ ফারুকি যেমন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমরা বিনম্রতার সঙ্গে এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি।’

‘যদি কেউ এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার কথা বলেন, সেটা তার ব্যক্তিগত মত – ওয়াকফ বোর্ডের নয়।’

‘দেশের হিত ও শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে আমরা এই আকারেই রায়টি কবুল করে নিচ্ছি।’

অথচ রায় ঘোষণার ঠিক পর পরই বোর্ডের অন্যতম আইনজীবী ও বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির নেতা জাফরইয়াব জিলানি কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন সুরে কথা বলেছিলেন।

তিনি জানিয়েছিলেন, রায়ের ভেতর অনেক ‘স্ববিরোধিতা’ আছে বলে তারা মনে করছেন এবং এর বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন কীভাবে করা যায় সেটা বিবেচনা করা হচ্ছে।

বস্তুত রায় পর্যালোচনার সেই প্রক্রিয়া এখনও জারি আছে, মজলিস বাঁচাও তেহরিকের মতো কয়েকটি সংগঠন তো এই রায়ের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের দ্বারস্থ হওয়ারও পরামর্শ দিচ্ছে।

মামলায় মুসলিমদের পক্ষে আর এক আইনজীবী এম আর শামসাদও বলেছেন, ‘রায়ের বেশ কয়েকটি দিক নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে।’

‘সিনিয়র আইনজীবী রাজীব ধাওয়ান-সহ অন্যরা এখন খতিয়ে দেখছেন এক্ষেত্রে কোন আইনি পথটা নেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে।’

রায়ে যে তারা খুশি নন, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অল ইন্ডিয়া পার্সোনাল ল বোর্ডের সচিব মৌলানা ফজরুর রহমান মুজাদ্দেদিও।

ভারতীয় মুসলিম সমাজে সম্ভবত সবচেয়ে ক্ষমতাশালী এই সংগঠনটির আর এক প্রবীণ সদস্য কামাল ফারুকি আবার বলছেন, বাবরি মসজিদ যেখানে ছিল সেই এলাকার বাইরে ৫ একর জায়গা দিতে চেয়ে আদালত আসলে দেশের মুসলিমদেরই অপমান করেছে।

ফারুকির কথায়, ‘আমি তো আপনাদের আগেই বলেছি অন্য জায়গায় আমাদের একশো একর জমি দিলেও কোনও লাভ নেই।’

‘মুসলিমদের ৬৭ একর জমি তো কবে থেকেই অধিগ্রহণ করে রেখেছে, তো কীসের আবার দান?’

‘৬৭ একর জমি আগেই ছিনিয়ে নিয়ে এখন আবার ৫ একর দিতে চাইছেন, এটা কেমন বিচার?’

হায়দ্রাবাদের এমপি ও অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি গতকালই বলেছিলেন, মুসলিমরা দুর্বল হলেও অতটাও গরিব নয় যে নিজেরা চাঁদা তুলে আল্লাহর ঘর বানানোর জন্য পাঁচ একর জমি কিনতে পারবে না।

এই ‘খয়রাতির দান’ ফিরিয়ে দেওয়ারই পক্ষপাতী তিনি – কিন্তু বলিউড লেজেন্ড ও শোলে-সহ বহু সফল ছবির চিত্রনাট্যকার সেলিম খান (সালমান খানের বাবা) কিন্তু মনে করেন ওই জমি মুসলিমদের অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত।

সেলিম খান বলছেন, ‘মুসলিমদের প্রতি আমার পরামর্শ হবে জমিটা নিন, কিন্তু ওখানে মসজিদ বানাবেন না।’

‘তার বদলে স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি বা হাসপাতাল বানান – পাঁচ একর কিন্তু খুব কম জায়গা নয়।’

‘আমাদের মসজিদের আর দরকার নেই, নামাজ তো আমরা ঘরে বসে বা ট্রেনে-বাসে-প্লেনে যেখানে খুশি পড়তে পারি – কিন্তু আমাদের শিশুদের সবার আগে দরকার শিক্ষা।’

হিন্দি সিনেমা জগতের এই প্রবীণ চিত্রনাট্যকারের কথায়, সুপ্রিম কোর্টের গতকালের রায়ের পরই মসজিদ-মন্দির নামক এই পিকচারের ‘দ্য এন্ড’ হয়ে যাওয়া উচিত।

তবে ভারতীয় মুসলিম সমাজের নেতারা সবাই যে অন্তত সেভাবে ভাবছেন না, সেটাও কিন্তু পরিষ্কার।

ভারতের দিল্লি জামে মসজিদের শাহী ইমাম সৈয়দ আহমেদ বুখারি বাবরি মসজিদ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় মেনে নিয়ে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে আর বিতর্ক তৈরি করে বাড়াবাড়ি করা উচিত না।

শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ আহ্বান জানান।

সৈয়দ আহমেদ বুখারি বলেন, ভারতের মুসলিমরা শান্তি চায়। এরইমধ্যে তারা বলেছেন আদালতের রায় মেনে নেবেন। আমরা রায় মেনে নিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে চলা হিন্দু-মুসলিম বিরোধের অবসান হওয়া উচিত।

শনিবার বাবরি মসজিদ মামলার রায়ে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত অযোধ্যার জমিতে মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। এই জমির পরিবর্তে মুসলিমরা অযোধ্যার অন্য কোথাও মসজিদ নির্মাণের জন্য পাঁচ একর জমি পাবেন।

অযোধ্যার এই স্থানটিকে হিন্দুরা রামের জন্মভূমি হিসেবে পবিত্র মনে করে থাকেন। সেখানে প্রায় ৭০০ বছর আগে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ১৯৯২ সালে মসজিদটি ভেঙে দেওয়া হয়। সেসময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় দুই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

শনিবার দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বেঞ্চ ঐতিহাসিক এ মামলার রায় দেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ