1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০২ পূর্বাহ্ন

মেধাবীদের দলে ভেড়াতে শিবিরের বিশেষ কৌশল

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৭ মে, ২০১২
  • ৯৩ Time View

মেধাবী তরুণদের দলে ভেড়াতে বিশেষ কৌশল নিয়েছে জামায়াত-শিবির। এ কৌশলেরই অংশ হিসেবে দেশব্যাপী এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিচ্ছে তারা। নতুন প্রজন্মের কাছে জামায়াতকে আরো পরিচিত করে তোলার পাশাপাশি সংগঠন শক্তিশালী করার জন্যই জামায়াত-শিবিরের এ আয়োজন বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।

বিষয়টি বুঝতে পেরে এরই মধ্যে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেছে।

একই কায়দায় পরীক্ষিত কর্মী বা সদস্যদের জামায়াতের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়ে আত্মনির্ভরশীল করে তুলছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। বেকারদের চাকরি বা ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য নগদ অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করছেন।

এই যুবক শ্রেণী একটা সময় সরকারের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা জেগেছে। আর তাই শিবিরের কার্যক্রমে কড়া নজর রাখছে সরকার।

এছাড়া তারা যুদ্ধাপরাধের বিচারে বিঘ্ন ঘটাতে ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারেন, এমন আশঙ্কাও করছে সংস্থাটি। সবকিছু মিলিয়ে কোনো অঘটন যাতে তারা না ঘটাতে পারেন, সে জন্য কড়া দৃষ্টি রাখছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি এক গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘কর্মী বাড়াতে নতুন কৌশল নিয়ে শিবিরের মাঠে নামার বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। এ ব্যাপারে আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি।’

এদিকে এসএসসি ফল প্রকাশের পর থেকে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ৫ হাজারেও বেশি ছাত্রকে শিবিরের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া শিবিরের  ছাত্রী সংস্থা জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের নিয়ে রাজধানীতে দু’টি অনুষ্ঠান করেছে। এতে শিবিরের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

শিবিরের একটি সূত্র জানিয়েছে, এবার সারাদেশে জিপিএ-৫ পাওয়া ৮২ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ১৫ থেকে ২০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে শিবির।

এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্র থেকে সারাদেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিকে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর দিনই ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে সাড়ে ৪শ’ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেয় শিবির।

গত ২০ মে দুই সহস্রাধিক জিপিএ-৫ প্রাপ্তকে সংবর্ধনা দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা শিবির। নগরীর ‘দি কি চিটাগং কমিউনিটি সেন্টারে’ এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল জব্বার।

এছাড়া একই দিনে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, সিলেট ও মৌলভীবাজারে জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিবিরের সাবেক সভাপতি ড. রেজাউল করিম। আর মৌলভীবাজারের ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মো. ইয়াহইয়া।

শিবির দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে এ ধরনের সংবর্ধনা দিচ্ছে। একই সঙ্গে তারা সারাদেশে সদস্য সংখ্য বৃদ্ধি করতেও কাজ করছে বলে শিবিরের একটি সূত্র জানিয়েছে।

শিবিরের সূত্র মতে, এ বছর দেশব্যাপী ছাত্রশিবিরের ১৪৭টি সাংগঠনিক শাখার মাধ্যমে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরই মধ্যে কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন  উপঢৌকন পাঠানো হয়েছে।

চলতি বছরের ৫ জুন পর্যন্ত শিবিরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে বলে সূত্র উল্লেখ করেছে।

সূত্র আরো বলছে, সব শাখায় নবীন ছাত্রছাত্রীদের দৃষ্টি কাড়তে শিবিরের কেন্দ্রীয় কোনো নেতা অথবা স্থানীয় প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তিকে এসব সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এসব কর্মসূচি ছাত্রদের দলে ভেড়ানোর কৌশল কি-না প্রশ্ন করলে শিবিরের প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মো. ইয়াহইয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘মোটেও না। এতো কষ্ট করে ছাত্ররা জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাই আমাদের দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা এ ধরনের সংবর্ধনার আয়োজন করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ ভিত্তিহীন। যেসব অভিযোগ উঠেছে তা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়।’

ঢাকার এক শিবির নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা মূলত চারটি ক্যাটাগরিতে সংবর্ধনা দিয়ে থাকি। এর মধ্যে আছে গরিব মেধাবী ছাত্র, সমাজে প্রতিষ্ঠিত, আওয়ামী লীগের কিংবা বিএনপির রাজনীতিবিদের পরিবার অথবা এলাকার প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তির ছেলে-মেয়ে।’

তাদের কিভাবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আনেন জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমরা প্রথমে জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য শুভেচ্ছা বাণী, রজনীগন্ধার একটি স্টিক, সঙ্গে এক কেজি মিষ্টি পাঠানোর চেষ্টা করি। পরে সংবর্ধনার কার্ড পাঠাই। কার্ডে শুধু অনুষ্ঠান কোন দিন এবং কোথায় হবে উল্লেখ থাকে।’

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের দিন তাদের কয়েকজন কর্মী ছাত্রদের বাসা থেকে নিয়ে আসেন বলেও জানান তিনি।

শিবির গত কয়েক বছর রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনসহ নামকরা কয়েকটি স্থানে এসব সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও সরকারের কঠোর মনোভাবে কারণে গত দু’বছর তারা কিছুটা গোপনে এসব অনুষ্ঠান করছে। এসব অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফসহ সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের এসব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হতো।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসা শিক্ষার্থীদের প্রথমে ভালো কলেজ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে সেসব কলেজে ভর্তি করানোর নানা প্রলোভন দেখানো হয়। যারা তাদের পছন্দমতো কলেজে ভর্তি হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন, তাদের পুরো ঠিকানা ও যোগাযোগের সব মাধ্যম রাখা হয়। এরপর শুরু হয় তাকে দলের টানার পরবর্তী কার্যত্রুম।

প্রভাবশালী পরিবারের ছাত্রদের সংবর্ধনার এসব বিষয় পরিবারের কাছে গোপন রাখতে বলা হয়।

এসব কর্মসূচি পালন করতে লাখ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। এসব অর্থের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে শিবিরের কেন্দ্রীয় এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রত্যেক শাখা তাদের নিজস্ব অর্থায়নে এ সংবর্ধনা দিয়ে থাকে। প্রকাশনা থেকে টাকা আসে। এছাড়া শুভাকাক্ষীরা আছেন, তারাও দেন। এরপরও যদি না হয় তাহলে কেন্দ্র থেকে আমরা টাকা দিয়ে থাকি।’

দলীয় সূত্র জানায়, গরিব মেধাবী ছাত্রদের দলে টানতেই সবচেয়ে সুবিধা পায় শিবির।

মেধাবীদের দলে ভেড়াতে শিবির আরো যেসব কৌশল নিয়েছে সেগুলো হলো- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমর্থক সংগ্রহের জন্য রক্তদান, বৃক্ষরোপণ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও দুস্থ কৃতী ছাত্রদের অর্থ সহায়তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ফার্স্টদের স্বর্ণপদক প্রদানসহ নানা কর্মসূচি।

সংগঠনটির মতে, ২০১১ সাল তাদের রাজনীতি অনুকূলে ছিল না। তারপরও শিবির তাদের কর্মকাণ্ড থেকে পিছিয়ে ছিলো না। গেল ডিসেম্বরেই সারা দেশে শিবিরের জেলা, উপজেলা ও ইউনিটের কাউন্সিল করা হয়েছে বলে শিবিরের এক নেতা বাংলানিউজকে জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে সংগঠনটির বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, ‘সরকার আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, রাজপথে কর্মসূচি পালনে বাধা, দলীয় কার্যালয়ে বসতে না দেওয়ায় আমরা গোপনে সংগঠনের কাজ চালিয়ে গেছি।’

জামায়াত ও শিবিরের অনেক সিনিয়র নেতার ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘বিরোধী দলের ওপর সরকারের যে কঠোর মনোভাব তা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের সিনিয়র নেতাদের দলে ফিরতে দেবে না। এজন্য শিবির দলকে টিকিয়ে রাখতে প্রকাশ্যে ও গোপনে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ