1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন

রোহিঙ্গা শোডাউন : দেশ অস্থির করার ষড়যন্ত্র

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৯
  • ১৯ Time View

রোহিঙ্গাদের শোডাউন বাংলাদেশের জনগণকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তারা বলেছেন, দেশি ও বিদেশি চক্র রোহিঙ্গাদের মদদ দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থির করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই মহাসমাবেশ করিয়েছে।

বিশ্লেষকরা এসব উসকানিদাতাকে আশ্রয় শিবির থেকে বিচ্ছিন্ন করে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেন, এটা একটা অশনিসংকেত। পাশাপাশি এ চক্রান্ত নস্যাৎ করতে দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতির ব্যাপারে সব অংশীদারের সঙ্গে আলোচনা করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে সরকার। রোহিঙ্গারা যে সমাবেশ করেছে সে ব্যাপারে আমাদের আগে জানানো হয়নি।

রোহিঙ্গাদের শোডাউনের ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল বলেছেন, ‘কীভাবে রোহিঙ্গারা এমন শোডাউন করল, সেটা আমরা আরআরআরসি কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাবে।’

এদিকে সরকারের ত্রাণ, পুনর্বাসন ও প্রত্যাবাসন (আরআরআরসি) কমিশনার আবুল কালামের কাছে জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, রোহিঙ্গারা কোনো আইনের অধীনে বাংলাদেশে আছে, এমন নয়। তাদের বাংলাদেশ মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে।

তারা রোহিঙ্গা শিবিরের ভেতরে সমাবেশ করেছে। গত বছরও তারা বার্ষিকী উপলক্ষে মোনাজাতের আয়োজন করেছিল। এবারও তারা মোনাজাতের কথা বলেছিল।

অপরদিকে প্রত্যাবাসন শুরুর দিনক্ষণের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়েই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রস্তুত। কিন্তু কতিপয় এনজিও ও রোহিঙ্গা নেতা তা ভণ্ডুল করতে চাইছে।

রোববার কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে মহাসমাবেশের আয়োজন করে রোহিঙ্গারা। তারা সংকটের দু’বছর উপলক্ষে এ শোডাউন করে। তবে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। কোনো শরণার্থী কিংবা অভিবাসী শিবিরে এমন শোডাউন নজিরবিহীন।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনায় বিতাড়িত হওয়ায় মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বিগত দু’বছরে তাদের ভয়ভীতি অনেকটা কেটে গেছে।

গতবার এমন দিনে তারা মোনাজাতের আয়োজন করেছিল। এবার কোনো অনুমতি ছাড়াই আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে মহাসমাবেশ করেছে।

রাজধানীতে সোমবার জাতীয় শোক দিবসের এক আলোচনায় অংশ নেয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, সমাবেশের ব্যাপারে মিডিয়ায় জানার পরপরই আমরা বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি।

এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য তারা যেন একটা উপায় বের করে। সরকার বাধা দেয়নি, কারণ তারা দোয়ার আয়োজন করছে বলে জানিয়েছিল।

এটা একটা বিরাট সমাবেশ। অনেক দাবি তারা করেছে। এই ঘটনার পর আমরা এমন পরিস্থিতির ব্যাপারে নতুন করে চিন্তাভাবনা করছি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মহাসমাবেশের পর আমরা বসে নেই। জিনিসটা দিনে দিনে জটিল হয়ে পড়েছে। পৃথিবীর কোথাও এমন নজির নেই। সুন্দর সুন্দর ইংরেজিতে লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেছে।

নিশ্চয়ই এটা পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে বোঝানোর দায়িত্ব মিয়ানমারের। মিয়ানমার তাদের আশ্বস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখনও আস্থার সংকট রয়েছে।

শোডাউনের সময় রোহিঙ্গারা পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে এ সমাবেশ করেছে বলে দৃশ্যমান হয়েছে। তাদের পরনে ছিল ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি। রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহর পরনে ছিল গেরুয়া রঙের পোশাক।

অনেকটা রাজনৈতিক সমাবেশের মতোই রোহিঙ্গা নেতারা সেখানে বক্তৃতা করে তাদের দাবি পেশ করেছেন। এসব দাবির মধ্যে মিয়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব প্রদান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার শর্ত রয়েছে।

এসব শর্ত পূরণ করলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন বলে ঘোষণা করেন। এটা তারা করতে পারেন না। কোনো আইনেও এ ধরনের কাজ করার অনুমতি নেই। কিন্তু তারা সব উপেক্ষা করে একটি চক্রের মদদে কাজটি করেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

পুলিশের সাবেক আইজি নূর মোহাম্মদ এমপি যুগান্তরকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের শোডাউন একটি অশনিসংকেত। তারা দেখাচ্ছে যে তাড়াতাড়ি তাদের জন্য কিছু করতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট- পুরো ব্যাপারটাই একটা অশনিসংকেত। এটা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’

তিনি বলেন, ভূ-রাজনীতির কারণে যারা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তারা একটা বিষফোঁড়া হিসেবে এটা সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে যারা আমাদের শত্রু, তারা রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করতে চাইবে।

এ নিয়ে তারা খেলাধুলা করতে চাইবে। রোহিঙ্গারা খুবই ক্ষুব্ধ প্রকৃতির। কারণ তারা নির্যাতিত হয়ে এসেছে। ফলে তারা অপরাধে জড়িয়ে যেতে পারে। এটা মোকাবেলায় আমরা কতটা প্রস্তুত, তার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মতিগতি বোঝার জন্য আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চয়ই কাজ করছে। এখনই সিরিয়াস কিছু হয়নি। ভবিষ্যতে সিরিয়াস হতে পারে।’

জানতে চাইলে বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের শোডাউন ছিল বাংলাদেশের জনগণকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা। রোহিঙ্গা সংকট হল বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতি এবং আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির সংঘাতের ফসল। স্বভাবতই তারা নিজ নিজ স্বার্থ হাসিল করতে চায়। রোহিঙ্গা দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থির করতে দেশি-বিদেশি চক্র মদদ দিচ্ছে। যতদিন রোহিঙ্গারা এদেশে থাকবে, ততদিন এই ষড়যন্ত্র চলতে থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের পরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গতিলাভ করেছে। চীনের মধ্যস্থতায় প্রত্যাবাসন শুরুর তারিখ নির্ধারণের পর রোহিঙ্গারা বেঁকে বসেছে। রোহিঙ্গাদের এই বেঁকে বসার পেছনে দেশি-বিদেশি উসকানি রয়েছে।’

অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের এবারের অগ্রগতিকে শুভসূচনা হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘চীনের সহযোগিতায় রোহিঙ্গারা যাতে আগামী দিনে ফিরে যেতে পারে, সেই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান রাতারাতি হবে না। সমাধানে সময় লাগবে। সেজন্য মিয়ানমারের ওপর কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করতে হবে।’

মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা নেতা, তাদের বলে মাঝি। রোহিঙ্গাদের ফিরে না যাওয়ার জন্য যারা উসকানি দেয়, তারা মূলত মাঝিদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। ফলে উসকানিদাতাদের মাঝিদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদে থাকার পরিবেশ যেন বজায় রাখে, সেজন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ রাখতে হবে। সর্বোপরি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য নির্ধারিত দিনে প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার পর পরই তারা এ শোডাউনের আয়োজন করে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রথম দফায় গত বছরের ১৫ নভেম্বর দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল।

ওই সময় মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য কোনো রোহিঙ্গা উপস্থিত হয়নি। ফলে প্রথম উদ্যোগ ভেস্তে যায়। তারপর ২২ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো প্রত্যাবাসন শুরুর লক্ষ্যে তারিখ নির্ধারণ হলেও কোনো রোহিঙ্গাই মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি হয়নি।

দ্বিতীয় দফায়ও প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার পরস্পরকে দোষারোপ করছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে বাংলাদেশের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মিয়ানমার।

দেশটি এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে ৩ হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গার তালিকা বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেছে।

কিন্তু জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থা ইউএনএইচসিআর তাদের সাক্ষাৎকার নেয়া শুরু করেছে প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য নির্ধারিত সময়ের দু’দিন আগে ২০ আগস্ট।

তার জবাবে বাংলাদেশ বলেছে, রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে চায়নি বলেই তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। এতে বাংলাদেশের কোনো গাফিলতি নেই।

তাছাড়া রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা মিয়ানমারের দায়িত্ব। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না।

বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা থাকলেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের কাছে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইতিমধ্যে ১১ লাখ রোহিঙ্গার তালিকাই মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করার উচিত ছিল।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের এবারের প্রক্রিয়ায় চীন মধ্যস্থতা করছে। জাপানও মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার অনুরোধ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই মিয়ানমার ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ