1. editor@priyodesh.com : editor : Mohammad Moniruzzaman Khan
  2. monirktc@yahoo.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  3. priyodesh@priyodesh.com : priyodesh :
রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তিতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৯
  • ১৫ Time View

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের পাশাপাশি নিরাপত্তা অংশীদারত্বের সাফল্যকে বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরে আগ্রহী হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বছরের গোড়ার দিক থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়টি বিভিন্ন স্তরের আলোচনায় জোরের সঙ্গেই তুলছে। বাংলাদেশ এখনো এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে কী আছে, তা খোঁজ নিতে শুরু করেছে।
তবে কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশের হুটহাট করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সই করাটা ঠিক হবে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি কোনো অঙ্গীকার দেশের স্বার্থের জন্য কতটা লাভ বা ক্ষতি, সেটা ভেবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
ঢাকা ও ওয়াশিংটনে কর্মরত বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা সম্প্রতি এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অস্ত্র বিক্রির প্রসঙ্গ তুলে বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক চুক্তির বিষয়টিকে সামনে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে ওয়াশিংটনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তাবিষয়ক আলোচনায় আকসা আর জিসোমিয়া সইয়ের কথা তুলেছে।
নিরাপত্তা–সংক্রান্ত বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, আকসা বা দ্য একুইজেশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট হচ্ছে সামরিক রসদবিষয়ক একটি রূপরেখা চুক্তি। মূলত সামরিক রসদ সরবরাহ, এ–সংক্রান্ত নানা ধরনের সেবা আর মেরামতের উপাদান রয়েছে এই চুক্তিতে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ২০০২ সালে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে চুক্তিটি সই করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে জিসোমিয়া (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট) হচ্ছে মার্কিন সরকার ও মার্কিন সমরাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সইকারী দেশের সরকার ও সমরাস্ত্রবিষয়ক বিশেষায়িত সংস্থার মধ্যে সম্পাদিত গোপন তথ্য বিনিময়ের চুক্তি। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যে চারটি সামরিক চুক্তি সই করেছে, তার মধ্যে এটি অন্যতম। ২০০২ সালে ভারতের সঙ্গে চুক্তিটি সই করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ঢাকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ১৩ এপ্রিল ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে আকসার প্রসঙ্গটি তুলেছেন। ঢাকায় গত ২ মে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সংলাপে আকসা ও জিসোমিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দুই চুক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, মে মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে ঢাকায় একটি বৈঠক হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টার এ বৈঠকে আকসা ও জিসোমিয়া নিয়ে আলোচনা হলেও মূলত আকসার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। ওই আলোচনায় আকসার খসড়া নিয়ে দুই পক্ষ কথা বলেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চুক্তির খুঁটিনাটি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মার্কিন কর্মকর্তারা তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আকসা সইয়ের আগ্রহ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান প্রথম আলো কে বলেন, ‘আমি মনে করি, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির (আইপিএস) কারণে এ অঞ্চলে প্রশিক্ষণ ও চলাচলের জন্য নিরাপদে রসদ সরবরাহের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্পষ্ট করে বললে আইপিএস বাস্তবায়নের জন্য এ অঞ্চলে রসদের সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ ভারত মহাসাগরে প্রশিক্ষণ আর দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতিতে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক জ্যেষ্ঠ এই কর্মকর্তা মনে করেন, চুক্তিটি করতে গিয়ে অন্য কারও স্বার্থে আঘাত হানতে পারে কি না, সেটা সতর্কতার সঙ্গে এবং ধীরেসুস্থে খেয়াল করতে হবে। বাংলাদেশ কৌশলগত দিক থেকে খুবই স্পর্শকাতর অঞ্চলে অবস্থিত। তাই বাংলাদেশের সব সময় ভারসাম্যমূলক কূটনীতির সম্পর্ক রাখা দরকার। এই চুক্তিতে একটি নির্দিষ্ট দেশের সৈন্যদের জন্য রসদ সরবরাহের বিষয়টি যুক্ত। আর্থিকভাবে এই চুক্তিতে কোনো ক্ষতি নেই। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে। যুক্তরাষ্ট্র যে দেশের সঙ্গে চুক্তিটি করে সেই দেশ ঋণ বা ইজারা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়। তবে চূড়ান্তভাবে এই চুক্তি বড় দেশ বা জোটের স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে যায় কি না, তা বিশেষভাবে দেখতে হবে।
১০ জুন ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত দুই দেশের অংশীদারত্ব সংলাপেও সামরিক চুক্তির প্রসঙ্গটি এসেছে বলে জানিয়েছে বৈঠকে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা। জানতে চাইলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আকসা ও জিসোমিয়ার প্রসঙ্গগুলো আলোচনায় তুলেছে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ওই আলোচনায় বলেছে, এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব। এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নয়।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবীর প্রথম আলো কে বলেন, দীর্ঘমেয়াদি কোনো অঙ্গীকার দিয়ে চুক্তি করার বিষয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় রাষ্ট্রের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তিতে ‘ফ্রি অব চয়েজে’র বিষয় থাকে। যা বৈদেশিক সম্পর্কের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই দর–কষাকষির সময় জোরালো অবস্থানে থাকতে হবে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই ভালো। নইলে আলোচনার প্রক্রিয়ায় যাঁরা থাকবেন, তাঁদের নৈর্ব্যক্তিকভাবে ও পেশাদারির সঙ্গে সেটা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে সোফা বা স্ট্যাটাস অব ফোর্সেস অ্যাগ্রিমেন্ট প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। শেষ পর্যন্ত চুক্তিটি আর হয়নি। তখন ঢাকা ও ওয়াশিংটনে কর্মরত এবং চুক্তির আলোচনার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকা সাবেক দুই সরকারি কর্মকর্তা সম্প্রতি এই প্রতিবেদককে জানান, মূলত একটি জায়গায় এসে চুক্তি সই করা থেকে বাংলাদেশ সরে এসেছিল। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে অবারিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিনিধি আর অস্ত্রের বাংলাদেশে প্রবেশাধিকার দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি আছে। যুক্তরাষ্ট্র কেন, কোনো দেশকেই এ ধরনের সুযোগ দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। এ আপত্তির কারণে শেষ পর্যন্ত চুক্তিটি সই হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ প্রথম আলো কে বলেন, এ ধরনের চুক্তি সই করতে যাওয়ার আগে তা যেন অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়, সেটি বিবেচনায় নিতে হবে। বাংলাদেশের সামরিক সামর্থ্য, প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর দিক থেকে এ ধরনের চুক্তি করতে কোনো সমস্যা নেই। তবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেভাবে বাড়ছে সেখানে চুক্তির দরকষাকষির সময় বাংলাদেশের অবস্থান যেন জোরালো থাকে। এ জন্য পূর্বপ্রস্তুতি থাকাটা জরুরি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© ২০২৫ প্রিয়দেশ